জেনেভা ক্যাম্পে মাদকের স্পট দখলে হামলা-লুটপাট
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে আবারও মাদক কারবারিদের দখলযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মাদক বিক্রির স্পট ও এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রতিদিনই রাতের অন্ধকারে অস্ত্রধারীদের হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ বাসিন্দারা।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভোরে ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরে নতুন করে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত চার দিন ধরে প্রতিদিনই ভোর রাতে একই ধরনের হামলা হচ্ছে। অন্তত ৩০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মাদক কারবারিরা সুমিদ (২৪) নামের এক তরুণকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তিনি ওই সেক্টরের বাসিন্দা সালামের ছেলে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, চলতি বছরে মাদক কারবারিদের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জনের, যার মধ্যে কয়েকজন শিশু রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ক্যাম্পে অন্তত ৪০টি মাদক ও অস্ত্রবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। গত ১০ মাসে মাদক ও হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেলের গ্রুপ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ৪ নম্বর সেক্টর নিয়ন্ত্রণকারী চুয়া সেলিম। সম্প্রতি তার সঙ্গে জোট বেঁধেছে পার মনু, পিচ্চি রাজা, শাহ আলম ও ইমতিয়াজ। তারা এখন ৭ নম্বর সেক্টর দখলে নিতে চায়।
আরও পড়ুন: জেনেভা ক্যাম্পে গোপন ককটেল কারখানার সন্ধান, উদ্ধার ৩৫
স্থানীয় সূত্র বলছে, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে ঢাকার অন্যতম হেরোইন সাপ্লাইকারি আরিফ ওরফে চাপা আরিফ। বুনিয়া সোহেলের কারবার দুর্বল হয়ে পড়ায় আরিফের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর তিনি চুয়া সেলিম গ্রুপকে হাতে নিয়ে পুরো ক্যাম্প দখলের চেষ্টা শুরু করেন। তার নির্দেশে রাতের অন্ধকারে অস্ত্রধারীরা বাড়ি ঘরে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে।
প্রতিপক্ষের ওপর হামলার রেশ থেকে বাদ যাচ্ছে না সাধারণ মানুষও।
বাসিন্দারা জানান, সারাদিনের ক্লান্তি শেষে নিরাপদে ঘুমাতে পারছেন না তারা। হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছে পার মনু, পিচ্চি রাজা, চুয়া সেলিম, শাহ আলম ও ইমতিয়াজ। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে লালন, রনি, তারেক, রাসেল, টুকি, সামির, বিকি, ফেরদৌস, চেম্বার রাজ, সুমন, আদিল, ফাইজান, নওশাদ ও বেলুনসহ আরও অনেকে।
মাদক কারবারিদের লাগাম টানতে পুলিশ জেনেভা ক্যাম্পের চারপাশে হুমায়ুন রোড, বাবর রোড ও গজনবী রোডের সাতটি পয়েন্টে স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করেছিল। দুপুর ২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলা এসব চেকপোস্টে প্রবেশকারীদের তল্লাশি করা হলেও রাত নামলেই মাদক ব্যবসা আবার প্রকাশ্যে শুরু হয়। ফলে উদ্যোগটি কার্যকর হয়নি।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে হামলা ও লুটপাটের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ কোনো অভিযোগ করে না। অভিযোগ পেলে আমরা মামলা নেই ও আসামিদের গ্রেফতার করি।
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের দখলযুদ্ধ দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনের হামলা ও লুটপাটে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও চেকপোস্ট স্থাপনের উদ্যোগও কার্যকর হয়নি। ফলে ক্যাম্পের বাসিন্দারা এখন নিরাপত্তাহীনতার চরম সংকটে রয়েছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








