News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:০৯, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

নতুন ফাটলরেখা শনাক্ত, বাড়লো ঝুঁকি

নতুন ফাটলরেখা শনাক্ত, বাড়লো ঝুঁকি

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশ ভারত নতুন ভূমিকম্প মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যা প্রথমবারের মতো পুরো হিমালয় অঞ্চলকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ভারতের ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (BIS) কোডের তথ্য ব্যবহার করে তৈরি এই মানচিত্রে দেখা যায়, পূর্বের তালিকায় হিমালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখানো হয়নি। 

তবে নতুন তথ্য অনুযায়ী, পুরো হিমালয়কে ৬ নম্বর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য বা ‘সেভেন সিস্টার্স’ সরাসরি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা—বিশেষত সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ—এখন বেশি উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।

নতুন মানচিত্র অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৬১ শতাংশ এলাকা এখন ভূমিকম্পপ্রবণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি নীতি-নির্ধারক ও নির্মাণ খাতকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী কাঠামো নির্মাণে আরও সতর্ক হতে উৎসাহিত করবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল নতুন ভূগর্ভস্থ ফাটলরেখা শনাক্ত করেছে। এটি জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে শুরু হয়ে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। গবেষণায় দেখা গেছে, এর কিছু অংশ ভূমিকম্পপ্রবণ এবং বাংলাদেশের এই অঞ্চলও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ফাটলরেখা সর্বোচ্চ ৬ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে সক্ষম।

আরও পড়ুন: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প

ডাউকি ফল্টলাইন এবং ইন্দো–বার্মা মেগাথ্রাস্ট ছাড়াও, সীতাকুণ্ড উপকূল, মধুপুর, শাহজিবাজার, জাফলং ও কুমিল্লার ফাটলরেখা আগে থেকে পরিচিত। নতুন ফাটলরেখা যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফাটলরেখা শনাক্ত করেছেন ভূতত্ত্ববিদ আক্তারুল আহসান, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভূমিকম্প বিষয়ক পিএইচডি করছেন। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, তুরস্ক ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা।

এই ফাটলরেখাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—একটি অংশ কম ঝুঁকিপূর্ণ, একটি অংশ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, এবং একটি অংশ ঝুঁকিমুক্ত। ঝুঁকিপূর্ণতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হবে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, নতুন ফাটলরেখার জন্ম ইউসিন যুগে, প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে। পরে এটি প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল। প্রায় ৫৬ লাখ বছর আগে, ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের চাপের ফলে মেঘালয় পর্বতমালা উত্থিত হওয়া শুরু হলে ফাটলরেখাটি পুনরায় সক্রিয় হয়।

বর্তমানে ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতিবছর প্রায় ৪৬ মিলিমিটার গতিতে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। এই চাপের কারণে ডাউকি ফল্টলাইন ও নতুন ফাটলরেখা তৈরি হয়েছে। 

গবেষকেরা মনে করেন, বেঙ্গল বেসিনে আরও অনেক ফাটলরেখা রয়েছে—কিছু ভূমিকম্প তৈরি করতে সক্ষম, কিছু নয়।

২১ ও ২২ নভেম্বর দুই দিনে বাংলাদেশে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্প ছিল ৫.৭ মাত্রার, যা ১০ জনের মৃত্যুর কারণ হয়। সাম্প্রতিক এই কম্পন জনমনে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ফাটলরেখার সঙ্গে অতীতের বড় ভূমিকম্প এবং ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, ১৫৪৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে ৩৩টি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • ১৮৯৭ সালের ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, যা প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ধ্বংস করেছিল।
  • ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল আর্থকোয়েক, প্রায় ৭ মাত্রার, শেরপুর ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছিল।
  • ১৯২৩ সালে ময়মনসিংহ–কিশোরগঞ্জে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম বলেন, বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক বাস্তবতায় বহু ফাটলরেখা রয়েছে। তবে ফাটল থাকলেই বড় ভূমিকম্প হবে এমন নয়। এটি নির্ণয় করতে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন।

ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এ কে এম খোরশেদ আলম বলেন, টেকটোনিক মরফোলজি পদ্ধতি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। গবেষণার প্রকাশিত সংস্করণে ঝুঁকির অঞ্চলগুলো আরও স্পষ্টভাবে উঠে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন মানচিত্র ও ফাটলরেখার তথ্য ভারতের নীতি-নির্ধারক ও নির্মাণ খাতকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী কাঠামো নির্মাণে আরও সতর্ক করতে উৎসাহিত করবে। বাংলাদেশেও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রস্তুতি ও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে তারা সতর্ক করেছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়