News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

দেশে নতুন ফাটলরেখা শনাক্ত: বাড়ছে ভূমিকম্প শঙ্কা

দেশে নতুন ফাটলরেখা শনাক্ত: বাড়ছে ভূমিকম্প শঙ্কা

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক কাঠামো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনুসন্ধানে যুক্ত হলো নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আক্তারুল আহসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও তুরস্কের গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক দল দেশে একটি নতুন ফাটলরেখার অস্তিত্ব শনাক্ত করেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া এ গবেষণার বিস্তৃত ফলাফল আগামী ১৪–১৯ ডিসেম্বর লুইজিয়ানায় অনুষ্ঠিতব্য আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদদের বৈশ্বিক সম্মেলনে উন্মোচন করা হবে।

দলটি ‘টেকটোনিক জিওমরফলোজি’—ভূ-পৃষ্ঠের গতিশীল পরিবর্তন বিশ্লেষণের আধুনিক পদ্ধতি—ব্যবহার করে ফাটলরেখার অবস্থান নির্ণয় করে। গবেষণা দলের প্রধান আক্তারুল আহসানের ভাষ্যে, নব-চিহ্নিত এই ফাটলরেখাকে তিন ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে—একটি অংশ অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ, একটি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এবং আরেকটি কার্যত ঝুঁকিমুক্ত। কোন অংশটি ঠিক কী ধরনের ঝুঁকি বহন করছে, তা পিয়ার-রিভিউ জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে এই ফাটলরেখার সূচনা। পরবর্তী ২ কোটি ৩০ লাখ বছর এটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। পরে প্রায় ৫৬ লাখ বছর আগে ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষজনিত চাপ এবং মেঘালয় পর্বতমালার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ফাটলরেখাটি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইন্ডিয়ান প্লেট প্রতিবছর ৪.৬ সেন্টিমিটার গতিতে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে অগ্রসর হওয়ায় এই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ চাপ আরও বাড়ছে—যা ভূমিকম্প সম্ভাবনা মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

আরও পড়ুন: নতুন ফাটলরেখা শনাক্ত, বাড়লো ঝুঁকি

গবেষকরা মনে করছেন, নব-আবিষ্কৃত ফাটলরেখার সঙ্গে অতীতের কয়েকটি বড় ভূমিকম্পের সংযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • ১৮৮৫ সালের ৭ মাত্রার ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’,
  • ১৯২৩ সালে ময়মনসিংহ–কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে আঘাত হানা ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প।

এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের বিগত ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য পথপরিবর্তনের পিছনেও এ ফাটলরেখার ভূমিকম্প-জনিত ভূমিকা থাকতে পারে বলে গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে আগে থেকেই ডাউকি ফাটলরেখা ও ইন্দো-বার্মা মেগাথ্রাস্টসহ বেশ কয়েকটি বড় ও সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক কাঠামো রয়েছে। সীতাকুণ্ড, মধুপুর এবং জাফলং অঞ্চলসহ আরও কয়েকটি এলাকায়ও সক্রিয় ফাটলরেখা পরিচিত। নতুন আবিষ্কারটি দেশে ভূমিকম্প ঝুঁকির সামগ্রিক তালিকায় নতুন বাস্তবতা যুক্ত করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম স্যাটেলাইট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এই গবেষণায় অবদান রাখেন। 

তার মতে, এই অঞ্চলে আরও অনুসন্ধান চালালে এ ধরনের আরও অজানা ফাটলরেখা শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

তবে তার সতর্ক মন্তব্য, “ফাটলরেখা থাকা মানেই বড় ভূমিকম্প হবেই—এমন নিশ্চয়তা নেই।”

ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এ কে এম খোরশেদ আলম গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতিকে ‘‘উচ্চমানের ও নির্ভরযোগ্য’’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

তার মতে, একটি ফাটলের দৈর্ঘ্য, শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষমতা এবং পুনরাবৃত্ত ভূমিকম্পের সময়চক্র নির্ণয়ই গবেষণার মূল লক্ষ্য, যা এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গত ২১ ও ২২ নভেম্বর দেশে পরপর চার দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়, যার মধ্যে একটির মাত্রা ছিল ৫.৭। এই ঘটনাগুলো জনমনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, এবং ভূতাত্ত্বিক গবেষণা ও ঝুঁকি মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তাকে আরও সামনে এনে দিয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়