News Bangladesh

কুবি সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২২ আগস্ট ২০২৫

কুবি শিক্ষার্থীকে বাসে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেফতার ২

কুবি শিক্ষার্থীকে বাসে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেফতার ২

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণচেষ্টা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় সেন্টমার্টিন পরিবহনের পাঁচজনের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দুই বছরের অজামিনযোগ্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি বাসে এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ঢাকার উদ্দেশে কোটবাড়ি বিশ্বরোড থেকে সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাসে ওঠেন। বাসটি পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে ইউটার্ন নেওয়ার কথা থাকলেও তাকে নিয়ে বাসটি চৌদ্দগ্রামের দিকে চলে যায়। সুয়াগাজী নামক স্থানে গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে পুনরায় পদুয়ার বাজার আসে। এ সময় বাসে চালক, হেল্পারসহ আরও তিনজন ছিলেন। বাসে একা পেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর গলায় ছুরি ধরে গহনা, টাকা-পয়সা নিয়ে নেয় ও ধর্ষণের চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর হাতে কামড় দেন অভিযুক্তরা। পরে তাকে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে ভুক্তভোগী অনুরোধে তাকে শাকিল আবাসিক হোটেলে নিয়ে আসে।

ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ আসে। শিক্ষার্থীরা বাস মালিক এবং অভিযুক্ত বাকি দুইজনকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার জন্য দাবি জানায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি ঠান্ডা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন: শনিবার পর্যন্ত বাতিল প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় এলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযুক্তদের দুই বছর কারাদণ্ড দেয়। বাকিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করবে বলে নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সেন্টমার্টিন পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন,  শিক্ষার্থীদের এসেই আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা শুরুতে আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। অবশেষে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মেনে নিয়েছে।

কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, গ্রেফতার হওয়া দুই জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বাকি অভিযুক্ত অন্য তিন জনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। আশা করি পুলিশ প্রশাসনের কোনও গাফিলতি থাকবে না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম জানান, শিক্ষার্থীদের থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে দ্রুতই চলে আসি। এসে দেখি পরিস্থিতি উত্তপ্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী এসেও হিমশিম খাচ্ছে। অবশেষে একটা সুরাহা হয়েছে। অভিযুক্তদের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমি ধর্ষণের পক্ষে নই, আমি চাই এর অভিযুক্তরা শাস্তি পাক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হায়দার আলী বলেছেন, আমাদের একজন নারী শিক্ষার্থীদের হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং বাস থেকে ফেলে দিয়ে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দুই জন ধরা পড়েছে, তারা পুলিশের কাছে আছে এবং পুলিশ প্রশাসন কথা দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি তিন জন গ্রেফতার করবে।

পুলিশ প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করবে এবং এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দেবে। এছাড়া, ছিনতাই ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা পুলিশ পৃথকভাবে খতিয়ে দেখবে। এই মামলার নিয়মিত আপডেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়