জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সরকারের দ্বৈত ভূমিকা ‘স্বার্থের সংঘাত’
ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বৈত ভূমিকা ‘স্বার্থের সংঘাত’ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি দাবি করেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার একই সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে নিরপেক্ষ থাকতে পারছে না।
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দ্দিন বলেন, সরকারের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বৈত ভূমিকা ‘স্বার্থের সংঘাত’ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, এখানে ক্ল্যাশ অব ইন্টারেস্ট আছে। এ সরকার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে সহযোগিতায় থাকব, ভোটে অংশগ্রহণ করব, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করব। কিন্তু সেই সরকারের প্রধান হিসেবে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে যে সুপারিশগুলো সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে, সেখানে জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার থেকে সরকার অনেকটা দূরে সরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, নোট অব ডিসেন্ট ছাড়া গণভোট আয়োজনের কোনো বিষয়ই ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হয়নি।
সালাহউদ্দ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে তা জাতীয় সনদে প্রতিফলিত হবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে। এই বক্তব্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা সরে যেতে পারেন না।
গণভোটের সময় নিয়ে তিনি বলেন, গণভোট আগে হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই, সময় নেই। তাছাড়া প্রয়োজনও নেই। একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে যদি একটি ছোট ব্যালটে এই গণসম্মতিটা নেওয়া যায়, সেটাই হবে সবচেয়ে যৌক্তিক, প্রাসঙ্গিক, গ্রহণযোগ্য এবং অতিরিক্ত ব্যয়ও হবে না।
আরও পড়ুন: ভোট হলে অস্তিত্ব থাকবে না জামায়াতের: মির্জা ফখরুল
তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এই বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, গণভোট আয়োজনের প্রক্রিয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একত্রিত করার পক্ষেই অবস্থান স্পষ্ট করেন।
সালাহউদ্দ্দিন সনদের প্রক্রিয়া ও নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে বলেন, আলোচনার শেষ পর্যায়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার দু-এক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বসেছিলেন। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সনদ স্বাক্ষরিত হোক এবং সনদের বাস্তবায়নের জন্য সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। সনদে প্রায় ৮৪টি দফা ছিল। সব দফায় নয়, কিছু দফায় আমাদের এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট ছিল। এটি প্রথাগত নোট অব ডিসেন্ট নয়; এতে লেখা আছে যে, এই দফাগুলো যেসব দল বা জোট নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ করে জনগণের অনুমোদন পেলে বাস্তবায়ন করতে পারবে।
নির্বাচনী জোট বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলা যায় না। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, তাদের মধ্যে চূড়ান্ত কোনো প্রস্তাব আসেনি। এনসিপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব তাদের পক্ষ থেকেও বা আমাদের পক্ষ থেকেও আসেনি। তবে একেবারে সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়ার কথাও নয়; এ বিষয়ে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ না করার বিষয়েও বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, আগামী নির্বাচন অবৈধ হবে বা অংশগ্রহণমূলক হবে না—এ ধারণার সঙ্গে আমরা একমত নই।
তিনি বলেন, দশম ও দ্বাদশ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। তখন যারা ভোট বর্জন করেছিল, তারা নিষিদ্ধ দল ছিল না, তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও ছিল না। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ‘নিরপেক্ষ’ আচরণ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দ্দিন বলেন, আমরা আশা করি এমন কোনো পদক্ষেপ সরকার নেবে না, যার মাধ্যমে জাতিতে বিভাজন বা অনৈক্য সৃষ্টি হবে।
একই সময় তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি মাসের শেষের দিকে দেশে ফিরবেন বলে তারা আশা করছেন।
তিনি বলেন, দু-এক দিন এদিক-ওদিক হতে পারে, তবে আমরা আশাবাদী যে মাসের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরবেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








