সরকারি মহলে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা: ফখরুল
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকারের ভেতরের একটি শক্তি এবং কিছু রাজনৈতিক মহল পরিকল্পিতভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব মহল নিত্যনতুন অপ্রাসঙ্গিক দাবি উত্থাপন করছে, যা মূলত গণতান্ত্রিক শক্তির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার কৌশল।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ।
বক্তৃতার শুরুতে মির্জা ফখরুল প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, ষাট ও সত্তরের দশকে কাজী জাফর ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য ছাত্রনেতা, যার বক্তৃতা মানুষকে বিমোহিত করত। যদিও রাজনৈতিক জীবনের এক পর্যায়ে তিনি স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, অন্তরে তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রপ্রিয় ও বিপ্লবী চরিত্রের মানুষ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আজকের সংকট তৈরি হতো না।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনও সময় আছে, জটিলতা না বাড়িয়ে সংস্কারসহ সব কাজ দ্রুত শেষ করুন এবং ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করুন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ৩১ দফা সংস্কারের মধ্যে যা যা প্রয়োজন তা ইতোমধ্যেই বিএনপি সহযোগিতা করেছে। কিন্তু বিগত এক বছরে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। বরং দুর্নীতি আরও বেড়েছে এবং রাজনৈতিক নেতারাও এতে জড়িয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: অভ্যুত্থানসহ আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা কাজী নজরুল: রিজভী
দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন দেশের ওপর হতাশার এক ছায়া ঘোরাফেরা করছে। যেদিকে তাকানো যায়, দুর্নীতির প্রভাবই চোখে পড়ে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক রাজনৈতিক নেতাও এতে জড়িয়ে পড়ছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তান সেনাদের সহযোগিতা করেছিল, তারাই এখন বড় বড় কথা বলছে। এ জন্য জনগণকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি যোগ করেন, লক্ষ্য অর্জন করেছি ভেবে বসে থাকলে বিরাট ভুল হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত সজাগ থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের ভেতরেই একটি মহল অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে যাতে গণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে। তারা অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করছে এবং দেশি-বিদেশি পর্যায়ে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বিদেশে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনাও এই অস্থিতিশীল চক্রান্তেরই অংশ। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ বারবার সংকটে পড়ে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফিনিক্স পাখির মতো এই জাতি বারবার জেগে ওঠে। তাই তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
আলোচনা সভায় অন্যান্য নেতারাও কাজী জাফর আহমেদের রাজনৈতিক জীবনের অবদান স্মরণ করেন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন। তবে মূল বক্তব্যে মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করে দেন যে, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না, যদি জনগণ সজাগ থাকে এবং গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








