News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছর কারাদণ্ড

রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছর কারাদণ্ড

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

একই মামলায় রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে দোষ স্বীকার করায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই রায় ঘোষণা করেন। 

প্যানেলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। 

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এদিন সকালে মামলার একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

ছয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ের প্রথম অংশ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে পড়া শুরু হয় এবং ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে চূড়ান্ত দণ্ড ঘোষণা করা হয়। 

ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে; তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন এবং তিনি সমান সাজা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু যেহেতু তিনি ‘রাজসাক্ষী’ হয়েছেন এবং আদালতকে এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন, তাই সত্য উন্মোচনে সহায়তা করায় তার সাজা কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ পালন করেছেন; আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন। আদালত রায়ে পলাতক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগের মধ্যে ৩টি প্রমাণিত হওয়ায় একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য দুটিতে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ মামলার শুনানির সময় তাকে মানবতাবিরোধী সব ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ড, পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা ও সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।

আরও পড়ুন: জুলাই হত্যা: ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়: 

১. গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়া। 

২. হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের 'হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ' দেওয়া। 

৩. রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ। 

৪. রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ। 

৫. আশুলিয়ায় জীবিত একজনকেসহ মোট ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া।

বিচার চলাকালে অডিও–ভিডিও প্রমাণ, ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা, ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের বর্ণনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ের ভিডিও ফুটেজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণে যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহারের প্রমাণও ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করে। এছাড়া শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও— যার মধ্যে ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামালের সাথে টেলিফোনে কথোপকথন ছিল— ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয় এবং এটিই ছিল পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলা।

গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় এবং ওইদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনের আবেদনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়, যেখানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামও আসে।

১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।

১০ জুলাই পাঁচ অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। ওইদিনই একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামি সাবেক আইজিপি মামুন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।

১২ অক্টোবর থেকে যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হয়। যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

বর্তমানে মামলার দুই প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। রায়টি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় এর ব্যবস্থা করা হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়