দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে ২৮ শতাংশ: পিপিআরসি
ফাইল ছবি
গত তিন বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ।
সোমবার (১৫ আগস্ট) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার–পিপিআরসির এক গবেষণায় দারিদ্র্য বৃদ্ধির এই চিত্র ওঠে এসেছে।
২০২২ সালে দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ। অর্থাৎ, এই সময়ে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে, যা ২০২২ সালের ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ৯.৩৫ শতাংশ হয়েছে।
পিপিআরসি’র এই গবেষণাটি ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেবেল ইন মিড ২০২৫’ শিরোনামে পরিচালিত হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর এর প্রভাব নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়। গত মে মাসে সারা দেশের ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জন ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে এই গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শহর ও গ্রামের পরিবারের আয়-ব্যয়ের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। শহরের পরিবারগুলোর মাসিক আয় কমেছে, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। ২০২২ সালে শহরের একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ৪৫ হাজার ৫৭৮ টাকা, যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা। অথচ একই সময়ে তাদের মাসিক গড় খরচ বেড়ে হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। অর্থাৎ, শহরের পরিবারগুলো ঋণ করে বা সঞ্চয় ভেঙে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আগস্টের ২৩ দিনে প্রবাসী আয় এলো ১৭৪ কোটি ডলার
অন্যদিকে, গ্রামের পরিবারগুলোর মাসিক গড় আয় সামান্য বেড়েছে। ২০২২ সালে তাদের গড় আয় ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা, যা এখন বেড়ে হয়েছে ২৯ হাজার ২০৫ টাকা। গ্রামের পরিবারগুলোর মাসিক গড় খরচ ২৭ হাজার ১৬২ টাকা, যা তাদের আয়ের চেয়ে কম।
পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—এই তিন ধরনের সংকটের সম্মিলিত প্রভাবে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। এই সংকটগুলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, দেশে বর্তমানে ১৮ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার খুব কাছাকাছি রয়েছে এবং যেকোনো সময় তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। অর্থাৎ, এই পরিবারগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ঘুষের হার কমেছে। গত বছরের আগস্টের আগে সেবা নিতে ৮.৫৪ শতাংশ মানুষ ঘুষ দিয়েছেন, যা আগস্টের পর ৩.৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এখনো সরকারি অফিস, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বেশি ঘুষ দিতে হয়।
এছাড়াও, একটি পরিবারের মাসিক আয়ের ৫৫ শতাংশ শুধু খাদ্যপণ্য কেনার পেছনেই চলে যায়। এই উচ্চ খাদ্য ব্যয় সাধারণ মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারের উচিত শুধুমাত্র জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর মনোযোগ না দিয়ে জনগণের জীবনযাত্রার মান এবং হয়রানি কমানোর দিকে নজর দেওয়া। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জনমুখী হওয়া জরুরি।
তিনি মনে করেন, জনগণের হয়রানি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমিয়ে দেয়। তাই একটি জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গঠনে নাগরিকের কল্যাণ, সমতা, ও বৈষম্যহীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে নীতি গ্রহণ করা উচিত।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








