তাসকিন-সৌরভ বিরোধে অবসান, মুচলেকায় পারিবারিক সমঝোতা

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার তাসকিন আহমেদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মারধরের অভিযোগ ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক শেষ পর্যন্ত পারিবারিক সমঝোতায় নিষ্পত্তি হয়েছে।
তার শৈশবের বন্ধু সিফাতুর রহমান সৌরভের দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহারের মাধ্যমে ঘটনার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে বুধবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায়।
২৮ জুলাই রাজধানীর মিরপুরে সোনি সিনেমা হলের সামনে এক কথিত ঘটনা ঘিরে সিফাতুর রহমান সৌরভ মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
অভিযোগে সৌরভ উল্লেখ করেন, তাসকিন তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঘুষি মারেন এবং হুমকি দেন।
মিরপুর থানার ওসি সাজ্জাদুর রহমান গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সৌরভের অভিযোগ অনুযায়ী, রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে এবং তদন্ত চলছে।
তবে অভিযোগ ওঠার পরপরই তাসকিন আহমেদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন।
তিনি লেখেন, এটা আসলে ভিত্তিহীন খবর। আমার আরেক বন্ধুর সঙ্গে আরেকজন বন্ধুর ঝগড়া হয়েছে। দুজনই আমার বন্ধু। সে আমার নাম উল্লেখ করেছে, কিন্তু আমার সঙ্গে কোনো ঝগড়া হয়নি। সবাইকে অনুরোধ করব, গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না। এটা আমার, আমার পরিবার এবং বন্ধুর জন্য অসম্মানজনক।
তাসকিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরপরই দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়।
সৌরভের খালা ঝুমা খান জানান, তাসকিনের পরিবারের পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার সময় চাওয়া হয়েছিল। তারা বাবা-চাচা সহ আমাদের সঙ্গে বসে মুচলেকা দিয়ে পারিবারিকভাবে সমাধানে পৌঁছেছে। মূলত সৌরভের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই অভিযোগ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: তাসকিনের বিরুদ্ধে বন্ধুকে মারধর ও হুমকির অভিযোগ
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এমন কিছু যাতে আর না ঘটে, সেই প্রতিশ্রুতি তাসকিনের পরিবার দিয়েছে। এজন্য আমরা অভিযোগ প্রত্যাহার করেছি। সত্যের পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
৩০ জুলাই সন্ধ্যায় দুই পরিবারের উপস্থিতিতে একটি লিখিত মুচলেকার মাধ্যমে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর সৌরভ আনুষ্ঠানিকভাবে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি তুলে নেন।
তিনি গণমাধ্যমে বলেন, বন্ধুদের মধ্যে একটি তর্কাতর্কি হয়েছিল, সেখান থেকেই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। আমি আগেই ক্ষমা চাইনি বা অভিযোগ তুলি নাই। আজকে পারিবারিকভাবে বিষয়টির সমাধান হয়েছে। তাসকিন ভাই আমার আত্মীয়ের আত্মীয় হন। আমাদের পরিবারও বসেছে। আগেই যদি এমনভাবে মীমাংসা হতো, তাহলে বিতর্ক এতোদূর গড়াত না।
যদিও বিষয়টির সমাধান হয়েছে, তবে বন্ধুত্বের জায়গায় যে ফাটল তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট সৌরভের কথায়, তাসকিন আমার ছোটবেলার বন্ধু। দেশের জন্য ওর অনেক কিছু দেওয়ার আছে। প্লেয়ার হিসেবে আমি ওকে শুভকামনা জানাই। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি ট্রমাটাইজড। একটু সময় লাগবে নিজেকে গুছিয়ে নিতে।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়। একপক্ষ তাসকিনের পক্ষ নিয়ে তার নির্দোষিতা দাবি করে, অন্যপক্ষ মারধরের অভিযোগের ভিত্তিতে তার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালে তাসকিনের পক্ষ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
তাসকিন তার পোস্টে লেখেন, সবাইকে অনুরোধ করব, গুজবে কান দেবেন না। এই ধরণের ভিত্তিহীন গুজব আমাদের সকলের জন্য অপমানজনক। অনুরোধ করব, বিষয়টি নিয়ে অহেতুক আলোচনা না করতে।
যদিও বিষয়টি আপাতত পারিবারিকভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে, তবে ঘটনার অভিঘাত বন্ধুত্বের ওপর গভীর ছাপ রেখে গেছে। উভয় পরিবারের পক্ষ থেকেই ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা একটি বড় শিক্ষা হিসেবে সামনে এসেছে—বিশেষ করে তারকাদের ব্যক্তিজীবন যখন জনসম্মুখে উঠে আসে, তখন সম্মান, গুজব ও মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি