নির্মাণাধীন ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত
জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে গণভবনে নির্মাণাধীন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এর নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে তিনি সাবেক গণভবন চত্বরে নির্মাণাধীন এই জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণাধীন এ জাদুঘরটি ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, ছাত্র-জনতার আন্দোলন, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং গণজাগরণ ও বিজয়ের ধারাবাহিক দলিল হিসেবে পরিকল্পিত।
গণভবনে পৌঁছে অধ্যাপক ইউনূস নির্মাণস্থলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, স্থপতি এবং বাস্তবায়নকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি নির্মাণকাজের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন এবং স্বচ্ছতা ও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাইলফলক। সেই আন্দোলনের স্মৃতি ও সংগ্রাম প্রজন্মের পর প্রজন্মে পৌঁছে দিতে এই জাদুঘর নির্মাণ একটি জাতীয় দায়িত্ব।
পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা এক ব্রিফিংয়ে জানান, জাদুঘরের কাজ যাতে আগামী জানুয়ারির মধ্যে শেষ করা যায়, সে লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরকে যৌথভাবে সমন্বয় করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, গণপূর্ত সচিব আদিলুর রহমান খান, জাদুঘর বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: জুলাই শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা, বিচার ও সুরক্ষার অঙ্গীকার
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এবং সেই আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ। বর্তমানে সাবেক গণভবনের পেছন দিকে প্রায় ১ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন এই জাদুঘরটি চারটি প্রধান অংশে বিভক্ত—
১. আন্দোলনের ইতিহাসভিত্তিক স্থায়ী প্রদর্শনী,
২. শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ,
৩. ইন্টার্যাকটিভ ডকুমেন্টেশন ও গণজাগরণ থিয়েটার,
৪. গবেষণা ও সংরক্ষণাগার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসে কাঠামোগত কাজ শেষ করে নভেম্বরের মধ্যে অন্তত দুটি গ্যালারি আংশিক উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জাদুঘর বাস্তবায়ন কমিটির এক সদস্য জানান, শুধু ইতিহাস নয়, এ জাদুঘর হবে জনগণের সংগ্রামের জীবন্ত দলিল। গণজাগরণের ধারাবাহিক গবেষণা ও উপস্থাপন এখানে চলবে নিয়মিত।
এদিকে পরিদর্শন শেষে ড. ইউনূস উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এই জাদুঘর কোনো ব্যক্তির নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের। যে তরুণরা তৎকালীন দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছে, তাদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্যই এই প্রয়াস।
অন্যদিকে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এটি নিছক কোনো জাদুঘর নয়, এটি হবে একটি নান্দনিক রাজনৈতিক নথিপত্র—যা মানুষের স্মৃতি ও অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেবে।
সর্বশেষে, প্রধান উপদেষ্টা জাদুঘরের নির্মাণসাইটে স্থানীয় শিশুদের একটি অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি দেখে অল্প সময়ের জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বলেন, তোমরাই একদিন এই ইতিহাস দেখবে—নিজেদের চোখে।
জাদুঘরের নির্মাণকাজ এখনো চলমান। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত একটি গ্যালারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি