ড. ইউনূসের কণ্ঠে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক রচিত হলো আজ, যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করলেন। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক ভিত্তি ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি ও গভীর আগ্রহ।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
এর ঠিক আগে, বিকেল ৫টায় তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মূল আয়োজন শুরু হয়। শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর শুরু হয় ঘোষণা পাঠ।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হলো ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ১২-দলীয় জোট ও বিভিন্ন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ দলিলের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতিতে সম্মত হয়েছে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো।
আরও পড়ুন: ‘৫ আগস্ট: জাতির পুনর্জন্মের দিন’
মঞ্চে ড. ইউনূসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সরকারের উপদেষ্টারা এবং বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা। বিএনপির পক্ষে ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান। জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। ১২-দলীয় জোটের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকিসহ এনসিপির নেতারাও ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
৫ আগস্ট ২০২৪ সালের এই দিনেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, যখন ছাত্র ও জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে থাকেন ড. ইউনূস। সেই সরকারই বিভিন্ন পক্ষের সাথে পরামর্শ করে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরি করে।
এ ঘোষণাপত্রের দাবিতে গত এক বছরে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা একাধিকবার বিক্ষোভ কর্মসূচি, স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধনের আয়োজন করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেটিকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার। ঘোষণাপত্র পাঠ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছিল বিশেষ ড্রোন শো এবং রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় ব্যান্ড সংগীত পরিবেশনা।
রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ড. ইউনূস, যা একযোগে প্রচারিত হয় টেলিভিশন ও বেতারে। তার এই ভাষণকে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার নীতিগত রূপরেখা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি