জুলাই শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা, বিচার ও সুরক্ষার অঙ্গীকার

ছবি: সংগৃহীত
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া সকল ছাত্র-জনতাকে ‘জাতীয় বীর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
একইসঙ্গে শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারীদের জন্য আইনগত সুরক্ষা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের দ্রুত বিচারের অঙ্গীকার করেন।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এক গণজমায়েতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেন।
এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় তিনি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া সকল ছাত্র-জনতাকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং তাদের পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান ও দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রুতি দেন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণা করছে। শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতার প্রতি প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা এবং পূর্ণ মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, বিগত ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের ন্যায্য বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।
আরও পড়ুন: যা আছে জুলাই ঘোষণাপত্রে
তিনি আরও বলেন, মানবতা বিরোধী এসব অপরাধের দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবার বন্ধ হবে। দ্রুত এবং উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, শহীদদের পরিবার, আহত আন্দোলনকারী ও জীবিত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি সুরক্ষা, চিকিৎসা সহায়তা এবং পূর্ণ পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা শুধু তাদের সম্মানই দিচ্ছি না, আমরা দায় নিচ্ছি তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিকতার।
ঘোষণাপত্রের ২৪ দফা অংশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কাঠামোগত রূপান্তরের সুস্পষ্ট রূপরেখা। ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের দ্বারা প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, আইনের শাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, শোষণহীন সমাজ এবং একটি মূল্যবোধসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এই রূপান্তরের যাত্রা শুরু হয়েছে।
বক্তৃতায় জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগকে জাতির পুনর্জাগরণ ও ঐতিহাসিক বাঁকবদলের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন ইউনূস।
তিনি বলেন, এই শহীদরা শুধু এক দুঃশাসনের অবসান ঘটাননি, তাঁরা একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
৫ আগস্ট ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ শুধু একটি প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বরং দেশের ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণে একটি স্পষ্ট নীতিগত ও আদর্শিক রূপরেখা। ‘জাতীয় বীর’ উপাধির মাধ্যমে সরকার যেমন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে, তেমনই মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিচারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও সাংবিধানিক সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরেছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জনঘোষণা হিসেবেও ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি