News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ৫ আগস্ট ২০২৫
আপডেট: ২১:৩৫, ৫ আগস্ট ২০২৫

রাজাকারদের শহীদ বানাতে শিবিরের ছবি প্রদর্শনী, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পণ্ড

রাজাকারদের শহীদ বানাতে শিবিরের ছবি প্রদর্শনী, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পণ্ড

ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ছবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আয়োজিত একটি প্রদর্শনীকে ঘিরে শুরু হওয়া ছাত্র বিক্ষোভের মুখে অনুষ্ঠান বন্ধ করে ছবি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। 

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এসব ছবি খুলে নিয়ে যাওয়া হয় প্রক্টর অফিসে।

প্রদর্শনীর আয়োজন করে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা—মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন এবং অধিকাংশের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

ছবি প্রদর্শনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। “আমার মাটি, আমার মা—রাজাকারের হবে না”, “স্বৈরাচার আর রাজাকার—মিলেমিশে একাকার”, “একাত্তরের বাংলায়—রাজাকারের ঠাঁই নাই”—এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে টিএসসি ও মধুর ক্যান্টিন এলাকা।

বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি ছাত্রশিবিরের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিতর্কিত ছবিগুলো খুলে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। 

এসময় ঢাবি ছাত্রশিবির নেতা মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। তবে প্রশাসন ও ছাত্রসমাজের সার্বিক পরিবেশ বিবেচনায় আমরা সম্মত হয়েছি ছবিগুলো সরিয়ে নিতে।

আরও পড়ুন: ৬ আগস্ট দেশজুড়ে বিএনপির নতুন কর্মসূচি

সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের একাংশের কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। ছাত্রশিবিরের নেতারা আমাদের আহ্বানে সহযোগিতা করেছেন, এ জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।

তবে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আগে থেকে জানতাম না যে এমন ছবি টানানো হবে। বিষয়টি নজরে আসার পরপরই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং সহকারী প্রক্টরকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে ছবিগুলো সরিয়ে এনেছি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই আয়োজনের জন্য প্রশাসনিক অনুমতির প্রয়োজন থাকলেও তা যথাযথভাবে নিশ্চিত হয়নি। ছাত্রশিবিরের তরফ থেকে যদিও অনুমতির দাবি করা হয়েছে, প্রক্টরিয়াল টিম এই অনুমতি যাচাই করছে বলেও জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর দেশে ‘জুলাই স্মরণ’ মাসজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন একাত্তরের শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ উপলক্ষ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের ব্যানারে আনা এবং তাদেরকে ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।

তবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর ‘আদর্শিক পুনর্বাসনের’ প্রচেষ্টা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে ঢাবি ক্যাম্পাসে। 

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাকিব মাহমুদ বলেন, একাত্তরের রাজাকারদের শহীদ বানানোর যে অপচেষ্টা হয়েছে, তা কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি রাজাকারমুক্ত থাকবে, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার তাৎপর্য শুধু একটি ক্যাম্পাসীয় বিতর্ক নয়—বরং রাজনীতির দীর্ঘস্থায়ী মেরুকরণ, ইতিহাস বিকৃতি এবং ‘তথ্যনির্ভর স্মৃতিরক্ষা’ নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলছে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও ইতিহাস বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়