গুম প্রতিরোধে নতুন আইন: গোপন আটককেন্দ্রের জন্য মৃত্যুদণ্ড
ফাইল ছবি
বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুম প্রতিরোধ, ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা এবং প্রতিকার নিশ্চিত করতে নতুন একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের আওতায় গোপন আটককেন্দ্র বা ‘গোপন আয়নাঘর’ স্থাপন ও ব্যবহারকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।
‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’ শীর্ষক এই খসড়াটি শিগগিরই অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সামনে উপস্থাপন করা হতে পারে।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে গুমের সংজ্ঞাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো ব্যক্তি, এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও কঠোর শাস্তির আওতায় আসবেন।
খসড়া অধ্যাদেশের ৫ নম্বর ধারায় গুমের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য যদি কাউকে নিজেদের পরিচয়ে, বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও সমর্থনে আটক বা অপহরণ করে এবং ওই ব্যক্তির অবস্থান গোপন রাখে, যার ফলে তিনি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন, তবে সেটি 'গুম' হিসেবে গণ্য হবে।
এই অপরাধের জন্য প্রাথমিকভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে যদি গুমের কারণে ব্যক্তির মৃত্যু হয়, লাশ পাওয়া না যায়, অথবা সাত বছর পার হওয়ার পরও তাকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা না যায়, তবে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানাও করা হতে পারে।
আরও পড়ুন: বিএসসি–ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দ্বন্দ্বে সরকারের ৮ সদস্যের কমিটি
এছাড়া, গুম সংক্রান্ত প্রমাণ নষ্ট করলে বা বিকৃত করলে সাত বছর পর্যন্ত জেল এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। গোপন আটককেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবহারের জন্যও একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
এই অধ্যাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গুমের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাত থেকে সরিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনী গুমের ঘটনার তদন্ত করতে পারবে না। যদিও কোনো অভিযোগ পুলিশ বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে করা যাবে, তবে তদন্ত করবে শুধুমাত্র মানবাধিকার কমিশন।
খসড়া প্রস্তাবে গুমকে একটি চলমান অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, অপরাধী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তির অবস্থান ও পরিণতি প্রকাশ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অপরাধটি চলমান থাকবে। এই অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। অভিযোগ গঠনের পর ১২০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
অগ্রহণযোগ্য অজুহাত: ধারা ৭-এ বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জরুরি অবস্থা বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশের মতো কোনো অজুহাতে গুমের মতো অপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়া যাবে না। এমন অজুহাত অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
সম্পত্তির ব্যবহার: গুম হওয়া ব্যক্তির দায় পরিশোধ, ভরণ-পোষণ বা অন্যান্য খরচের জন্য তার বৈধ ওয়ারিশরা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ব্যবহার বা হস্তান্তর করতে পারবেন।
বিশেষ তহবিল: গুমের শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ এবং আইনি সহায়তার জন্য মানবাধিকার কমিশনের অধীনে একটি স্বতন্ত্র ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা তহবিল’ গঠন করা হবে।
জাতিসংঘের 'International Convention for the Protection of All Persons from Enforced Disappearance'-এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপটে এবং সংবিধানের অধিকার সুরক্ষার উদ্দেশ্যে এই নতুন অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশটি অতীতের সব গুমের ঘটনাকেও তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








