রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম নিয়ে আপিল শুনানি ৪ নভেম্বর
ফাইল ছবি
দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম বা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে আবারও নতুন করে আপিল শুনানির অনুমতি দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার পরবর্তী আপিল শুনানির জন্য আগামী ৪ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই আইনি লড়াইয়ে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হলো।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে প্রধান বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতের এই সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনের মধ্যে চলমান পদমর্যাদা সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তির পথ খুলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আদালতে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এছাড়া, ৬৯ জন আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক উপস্থিত ছিলেন।
আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় আদালতের এই সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
মামলাটির মূল বিষয়বস্তু হলো, সরকারের জারি করা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের তালিকা। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে প্রথম এই তালিকা তৈরি করা হয়, যা ২০০০ সালে সংশোধন করা হয়েছিল। এতে বিভিন্ন সাংবিধানিক পদ এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তুলনায় নিচে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ২১ অক্টোবর
এই তালিকা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট সেই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে, ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ একটি যুগান্তকারী রায় দেন। সেই রায়ে তিনটি প্রধান নির্দেশনা ছিল:
১. যেহেতু সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, তাই সাংবিধানিক পদাধিকারীরা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে অগ্রাধিকার পাবেন।
২. জেলা জজ ও সমমানের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা ১৬ নম্বরে উন্নীত করে সরকারের সচিবদের সমমর্যাদা দেওয়া হবে।
৩. অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমানের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা জেলা জজদের ঠিক পরের ধাপ অর্থাৎ ১৭ নম্বরে অবস্থান করবেন।
তবে, আপিল বিভাগের এই রায়ের বিরুদ্ধেও রিভিউ আবেদন করা হয়।
আদালতের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই রিভিউ আবেদনের ওপর নয়, বরং নতুন করে আপিলের ওপর শুনানি হবে, যা মামলার গুরুত্ব ও জটিলতার দিকটি তুলে ধরে। গ্রেনেড হামলা মামলার টানা শুনানির কারণে রিভিউ আবেদনের রায় পিছিয়ে যাওয়ার পর আপিল বিভাগ নতুন করে এই সিদ্ধান্ত নিলেন।
এই নতুন শুনানির তারিখ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে আশা করা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা নিয়ে চলমান আইনি বিতর্ক এবং বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের এই জটিলতার একটি চূড়ান্ত সমাধান বেরিয়ে আসবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








