News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১২, ২ নভেম্বর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলা ও ত্রাণ সংকট অব্যাহত

গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলা ও ত্রাণ সংকট অব্যাহত

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সই হওয়া যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলা এবং মানবিক সংকট অব্যাহত রয়েছে। প্রতিশ্রুত ত্রাণের মাত্র ২৪ শতাংশ গাজায় প্রবেশ করতে পারছে, বাকি ৭৫ শতাংশ আটকে রাখা হয়েছে। এতে গাজার ২৪ লাখের বেশি মানুষ তীব্র মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। 

রবিবার (০২ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।

গাজা সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, অক্টোবর ১০ থেকে ৩১ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। দৈনিক হিসেবে গড়ে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের মাত্র ২৪ শতাংশ। 

গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে ২৪ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সংকট ভয়াবহভাবে বেড়েছে এবং এর দায় সম্পূর্ণ ইসরায়েলের।

ত্রাণপ্রবাহ সীমিত হওয়ার কারণে খাদ্য, পানি, ওষুধসহ মৌলিক জিনিসের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যাংক খোলা থাকলেও নগদ অর্থ নেই; ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষরা খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে কালোবাজারি ও দালালদের মাধ্যমে বেতন তুলছে, যা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তন হচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও দালাল চক্র, ফলে সাধারণ মানুষ অমানবিক চাপের মধ্যে পড়ছে।

এ অবস্থায় গাজা কর্তৃপক্ষ চুক্তি মধ্যস্থতাকারী, বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছে, “কোনও শর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়া” ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে।

আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে ট্রেনে ছুরি হামলা, ৯ যাত্রী গুরুতর আহত

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে। শনিবার (০১ নভেম্বর) ভোরে দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে বিমান, কামান ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পূর্বদিকে কয়েকটি আবাসিক ভবনও ধ্বংস হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দিনের বেশিরভাগ সময় জুড়ে ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণ চলেছে ‘ইয়েলো লাইন’ সংলগ্ন এলাকায়। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ক্রমাগত হামলায় বহু স্থানে উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুক্রবার আগের হামলায় নিহত ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ড্রোন এবং ভারী গোলাবর্ষণের কারণে ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। আকাশে ড্রোনের অব্যাহত উপস্থিতি ও বোমাবর্ষণের কারণে গাজার সিভিল ডিফেন্স অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অন্তত ২২২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন।

গাজার পশ্চিম তীরজুড়ে নতুন করে হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি দখলদার ও বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণ বেড়েছে। নাবলুসের দক্ষিণে তাল শহরে তিন ফিলিস্তিনি নারীকে মারধর করা হয়েছে, ক্যালকিলিয়ার পূর্বে ফারাতা শহরে একটি ভবন ও গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুলকারেম ও হেবরনে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযানে গুলি বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। 

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, এসব হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তের সরাসরি লঙ্ঘন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক জানিয়েছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রুট পরিবর্তনের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। কনভয়গুলোকে এখন মিসরের সীমান্তঘেঁষা ফিলাডেলফি করিডর হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে যেতে হচ্ছে, যা মারাত্মকভাবে যানজটে আক্রান্ত। তিনি আরও জানান, ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারে অতিরিক্ত সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট চালুর প্রয়োজন রয়েছে।

দুই বছরের লাগাতার ইসরায়েলি হামলায় বহু পরিবার এখনো আশ্রয়হীন। ঘরবাড়ি ও পুরো এলাকা ধ্বংস হওয়ার কারণে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। মানবিক ত্রাণ প্রবাহ সীমিত থাকায় সাধারণ মানুষ খাদ্য, পানি, ওষুধ, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত।

গাজার সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি চাপ সৃষ্টি করছেন, যাতে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন নির্ধারিত ৬০০ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি বাস্তবায়ন করা হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়