জম্মু-কাশ্মীরে ভূমিধসে মৃত ৩১, বৈষ্ণোদেবী যাত্রা স্থগিত
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার কাটারা শহরের বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের কাছে ভয়াবহ ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২৩ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বেশ কয়েকজন চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরো জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) রিয়াসি জেলা পুলিশের প্রধান পরমবীর সিং সর্বশেষ পরিস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বৈষ্ণোদেবী যাত্রাপথের ইন্দ্রপ্রস্থ ভোজনালয় ও আশপাশের এলাকায় ভূমিধস নামে। এতে বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থী আটকা পড়েন। ধসের পরপরই মন্দির কমিটি ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ), সেনাবাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকরাও উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন। তবে অবিরাম বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
টানা বৃষ্টিপাতের ফলে শুধু ভূমিধসই নয়, বিভিন্ন এলাকায় হড়পা বানও দেখা দিয়েছে। এর ফলে সড়ক যোগাযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রিয়াসি ছাড়াও ডোডা, কিশ্তওয়াড়, সাম্বা, উধমপুর এবং জম্মু শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় সব নদীই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য অস্থায়ী ত্রাণশিবির ও চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ১৩ জনসহ একদিনে নিহত ৬৪
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক সমস্যার মধ্যে তার প্রশাসন কাজ করছে। প্রবল বৃষ্টি এবং ভূমিধসের কারণে অনেক ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে। এতে অনেক তীর্থযাত্রী আটকা পড়েছেন। দিল্লি থেকে অতিরিক্ত উদ্ধারকারী দল ও সরঞ্জাম নিয়ে সামরিক বিমান জম্মুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বৈষ্ণোদেবী মন্দির কর্তৃপক্ষ তীর্থযাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী দুই-তিন দিনও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। কাটারা, জম্মু, সাম্বা, রিয়াসি, উধমপুর, ডোডা ও কিশ্তওয়াড় জেলায় ভূমিধস ও হড়পা বানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এদিকে, প্রতিবেশী পাহাড়ি রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানেও ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে তিনটি জেলায় রেড অ্যালার্ট বা লাল সংকেত জারি করা হয়েছে। বিপাশা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে এবং চণ্ডীগড়-মানালি মহাসড়কের একটি অংশ স্রোতে ভেসে গেছে। এ বছর জুন মাসের ২০ তারিখ থেকে হিমাচল প্রদেশে বর্ষার মৌসুমে এ পর্যন্ত ৩১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। জম্মু ডিভিশনের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের পাইপলাইন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








