প্রাণনাশের হুমকি আতঙ্কে রাবি শিক্ষকরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: টেলিফোনে চাঁদা চেয়ে একের পর এক প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে অনেকেই পেশাগত কাজ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি চলাফেরাও সীমিত করেছেন। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরুতে হলে বিশ্বস্ত কাউকে সঙ্গে নিচ্ছেন কেউ কেউ। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপউপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, “এভাবে শিক্ষকদের কাছে চাঁদা চাওয়া ও হত্যার হুমকি উদ্বেগের। গত বছর অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে দিনে দুপুরে কুপিয়ে হত্যার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের মধ্যে। এখন আবার নতুন করে চাঁদা দাবি করে প্রাণনাশের হুমকি তাদেরকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে।”
নিষিদ্ধ পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, লাল বাহিনীসহ বিভিন্ন পরিচয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে, আর চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অথবা আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় মাসে ১০-১১ জন প্রগতিশীল শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনন্দ কুমার সাহার মোবাইলে অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল করে চাঁদা দাবি করা হয়। সে নিজেকে লাল বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মার্চ চাঁদা দাবি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেমের কাছে। ১৬ মার্চ একই ধরনের হুমকি পান দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সবশেষ ২১ মার্চ ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুমদার ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাসকেও অনুরূপভাবে হুমকি দেওয়া হয়।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাসের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“আমাকে এখন সতর্কভাবে চলতে হচ্ছে, কারণ হুমকি পাওয়ায় আমি কিছুটা শঙ্কিত আর তার প্রভাব আমার গবেষণা কাজে পড়ছে।”
মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো মুক্তচিন্তার শিক্ষকদের মানসিক চাপে রাখার জন্য এই হুমকি দিচ্ছে, জঙ্গিবাদীরাই এই হুমকির নেপথ্যে কাজ করছে বলে মনে করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান জানান,“একের পর এক হুমকির ঘটনায় হুমকিদাতাদের শনাক্তে পুলিশ প্রশাসনকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাদের এবং যেসব নম্বর থেকে ফোন আসছে, তার একটা তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।”
শিক্ষকদের হুমকি দেওয়ার বিষয়টিকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলা হয়েছে বলে জানান প্রক্টর।
ঘটনার ব্যাপারে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, “প্রাণনাশের হুমকির পর সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক, ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুমদার ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাসসহ চারজন শিক্ষক নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন।
অভিযোগগুলো পুলিশ গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছে, হুমকি দেওয়া ফোন নম্বরগুলো প্রশাসন ট্রাকিং করে দেখে বলছে উক্ত নম্বর গুলো রাজশাহীর বাইরের, তবে খুব শিগগিরই একটা ভাল রেজাল্ট পাওয়া যাবে বলে ওসি জানান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








