News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১৭ আগস্ট ২০২৫

বিশ্বব্যাংকের কড়া নীতি: শর্ত না মানলে অর্থ ছাড় বন্ধ

বিশ্বব্যাংকের কড়া নীতি: শর্ত না মানলে অর্থ ছাড় বন্ধ

ফাইল ছবি

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোতে এখন থেকে স্থানীয় শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কোটা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। 

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট শ্রম ব্যয়ের অন্তত ৩০ শতাংশ স্থানীয় শ্রমিকদের পেছনে ব্যয় করতে হবে। এই নিয়ম কার্যকর হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে। 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্বব্যাংকের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও স্থানীয় শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো এক চিঠিতে এই নতুন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এত দিন আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদাররা বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে পারতেন, যা স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করছিল। কিন্তু এখন থেকে এই নিয়মের পরিবর্তন আসছে।

কী আছে নতুন নীতিমালায়?
বিশ্বব্যাংকের নতুন নীতি অনুসারে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে অংশ নিতে হলে প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একটি লোকাল লেবার মেথড স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। এই স্টেটমেন্টে তাদের দেখাতে হবে, কীভাবে তারা মোট শ্রম ব্যয়ের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগে খরচ করবে। শুধু তা-ই নয়, এই স্টেটমেন্টে নিম্ন ও অর্ধদক্ষ স্থানীয় শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কী ধরনের প্রশিক্ষণ বা উদ্যোগ নেওয়া হবে, তারও বিস্তারিত উল্লেখ থাকতে হবে।

যদি কোনো ঠিকাদার এই শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের প্রাপ্য অর্থ ছাড় বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রকল্পের তদারকি কর্তৃপক্ষ যাচাই করবে শর্ত পূরণ হয়েছে কি না। যদি দেখা যায় শর্ত মানা হয়নি, তবে ঠিকাদারের পাওনা টাকার একটি অংশ আটকে রাখা হবে। এই বিধানকে স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি আর্থিক কড়াকড়ি বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির চার্জশিট চূড়ান্ত, জড়িত ৫ দেশের নাগরিক

বাংলাদেশে এর প্রভাব কী হবে?
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা এই নতুন শর্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। 

তারা জানান, এর আগে বিশ্বব্যাংক-সহায়তা প্রকল্পে স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না, যার ফলে ঠিকাদাররা নিজেদের ইচ্ছেমতো শ্রমিক নিয়োগ করতেন এবং অনেক সময় বিদেশি শ্রমিকের ওপর বেশি নির্ভর করতেন।

ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই শর্ত কার্যকর হলে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় শ্রেণির বাংলাদেশি শ্রমিকের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। একই সাথে প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের দক্ষতাও বাড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের শ্রমবাজারের জন্য খুবই উপকারী।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এই নীতিকে বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক কর্মসংস্থান এজেন্ডার একটি অংশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ‘কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি’ এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই নীতি ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’ ধারণার একটি প্রতিফলন। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক তার বিনিয়োগগুলোকে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করছে।

তিনি আরও বলেন যে, এই পদক্ষেপটি দীর্ঘদিনের একটি সমালোচনাকে প্রশমিত করতে পারে, যেখানে বলা হতো বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের বড় অংশ দাতা দেশগুলোর কাছেই ফিরে যায়, বিশেষ করে পরামর্শক ফি এবং সেবার মাধ্যমে। তবে এর বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে তিনি সতর্ক থাকতে বলেছেন।

ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর নতুন দায়িত্ব
এই নীতি কেবল ঠিকাদারদের ওপরই নয়, বরং ঋণগ্রহীতা দেশগুলো, যেমন বাংলাদেশের ওপরও বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়েছে। এখন থেকে এই দেশগুলোকে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কৌশলে স্থানীয় শ্রমবাজারের বিস্তারিত বিশ্লেষণ যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি প্রতি তিন মাস অন্তর বিশ্বব্যাংকে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে, যা একটি নির্ধারিত ফরম্যাটের মাধ্যমে করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এই নতুন নিয়ম সহজে বাস্তবায়নের জন্য তারা বিস্তারিত নির্দেশিকা, গাইডলাইন এবং অনলাইন প্রশিক্ষণ উপকরণ তৈরি করছে। এর ফলে ঋণগ্রহীতা দেশ, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং ঠিকাদারেরা সহজেই নিয়মগুলো বুঝতে ও মানতে পারবে।

এই নীতিটি বিশ্বব্যাংকের ২০১৬ সালের প্রকিউরমেন্ট ফ্রেমওয়ার্কের একটি হালনাগাদ সংস্করণ, যা মূলত উন্নয়ন প্রকল্পে প্রতিযোগিতা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল। নতুন সংযোজনের মাধ্যমে এখন থেকে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নও সরাসরি প্রকল্পের একটি অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। এই পদক্ষেপের ফলে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শুধু অবকাঠামোগত সুবিধা নয়, বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থিক ও দক্ষতা উন্নয়নেরও সরাসরি কারণ হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়