দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নভেম্বর মাসে দেশে ফিরতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। নভেম্বরের ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে তার দেশে ফেরার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে আভাস দিয়েছেন দলের একাধিক উপদেষ্টা ও ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকরা।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান তারেক রহমান। এরপর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) স্ট্যাটাসে বসবাস করছেন, যা তাকে স্থায়ীভাবে বসবাস, কাজ ও পড়াশোনার সুযোগ দেয় এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার অধিকারও প্রদান করে।

দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। যাত্রার আগে তিনি সৌদি আরবে ওমরা পালন করতে পারেন। এ বিষয়ে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ট্রাভেল পাস ইস্যুসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

গত কয়েক মাসে তারেক রহমান লন্ডনে দুই প্রভাবশালী কূটনীতিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের একজন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সাক্ষাতে তিনি দেশে ফেরার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টা বলেন, অনেক যদি-কিন্তুর পর এখন স্পষ্ট যে আমাদের নেতা নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে ফিরতে চান। নভেম্বরের ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে তিনি ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছাড়তে পারেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, “তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, তবে চূড়ান্ত তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।”

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছেন, শিগগিরই দেশে ফিরবেন। সেটা অবশ্যই নির্বাচনের আগে। তিনি এটাও বলেছেন যে, নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাহলে ধরে নিতে হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি দেশে ফিরবেন।

তবে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন সংক্রান্ত প্রশ্নে ডা. জাহিদ বলেন, ওমরাহ ধর্মীয় বিষয়। এটা যার যার ব্যক্তিগত ইচ্ছে। উনি যদি ওমরাহ করতে যান, সেটা তখন আপনারা জানতে পারবেন। আগাম কিছু বলা সম্ভব না।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কবে দেশে ফিরবেন সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তার দেশে ফেরার খবর দলের পক্ষ থেকে সময়মতো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

আরও পড়ুন: তারেক রহমান জ্বরে আক্রান্ত

‘আমরা বিএনপির পরিবার’র আহবায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন বলেন, এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। এটুকু বলতে পারি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেদিন আসার কথা বলবেন, সেটাই সঠিক। অনুমান করে লাভ নেই। তবে উনি খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন—এটা সঠিক। কিন্তু উনি কাউকে কোনো তারিখ বলেননি এবং বলবেনও না।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশে ফেরার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারেক রহমানের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ এসইউভি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি বুলেটপ্রুফ মিনিবাস কেনার প্রক্রিয়া চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে গাড়ি দুটির অনুমোদন দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব। বিএনপির সব যৌক্তিক অনুরোধ বিবেচনা করা হবে।

বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার পর গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় নানা বাধা আসতে পারে। এই যাত্রায় তারেক রহমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন, তাই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন পর ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান এলেও আসেননি তারেক রহমান ও তার কন্যা জায়মা রহমান। পরে জোবাইদা রহমান একমাস দেশে কাটিয়ে ৫ জুন লন্ডনে ফিরে যান।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। তবে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো তার ফেরার নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছে। তার থাকার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত একমাত্র তারেক রহমানই জানেন এবং সেটি তিনি নিজেই ঘোষণা করবেন বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।