News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৭ নভেম্বর ২০২৫

ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে বিভ্রান্তি: সরকার বলছে ‘সর্বৈব মিথ্যাচার

ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে বিভ্রান্তি: সরকার বলছে ‘সর্বৈব মিথ্যাচার

ফাইল ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়ন খাতে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের অভিযোগকে ‘সর্বৈব মিথ্যাচার ও পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা’ হিসেবে অভিহিত করেছে কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকার। 

বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এক বিবৃতিতে এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বিস্তারিত হিসাব তুলে ধরেন।

বিবৃতিতে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, অতিসম্প্রতি একটি মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যাচার এবং পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা। স্পষ্টতই এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা; অপপ্রচারকারীরা কমিশনের কোনো ভাষ্য সংগ্রহ করেননি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি।

তিনি জানান, কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে সব ধরনের ব্যয় নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং আপ্যায়ন খাতে তথাকথিত ‘৮৩ কোটি টাকা’ ব্যয়ের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু করার পর ২০২৪–২৫ এবং ২০২৫–২৬ অর্থবছরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বমোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর বিপরীতে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

কমিশনের মোট বাজেটের মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। এই আপ্যায়ন ব্যয়ের সিংহভাগ হয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনা এবং কমিশনের বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের আপ্যায়নে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশনের কাজ তিনটি মূল পর্যায়ে পরিচালিত হয়। প্রথম পর্যায়ে (২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫ পর্যন্ত) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয় ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যার ব্যয় ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। প্রতিদিনের গড় ব্যয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম। বৈঠকগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য নাশতা, মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজের ব্যবস্থা করা হয়।

আরও পড়ুন: ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ: এসবি

তৃতীয় পর্যায়ে ৭টি বৈঠকে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন; এই পর্বে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয় ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।

এছাড়া কমিশনের ৫০টি অভ্যন্তরীণ সভায় ব্যয় হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ১৩টি বৈঠক ও তিনটি সংবাদ সম্মেলনে ব্যয় হয় ২ লাখ ৩৪০ টাকা।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ১৩টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। উল্লেখযোগ্যভাবে, এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা কোনো সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করেননি।

তাছাড়া নয় মাসে অতিথি আপ্যায়নের জন্য ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা। এই ব্যয়ের আওতায় বিদেশি কূটনীতিক, দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সম্পাদক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অতিথি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

কমিশন বলেছে, ওপরের বিস্তারিত হিসাব থেকেই স্পষ্ট যে, ৮৩ কোটি টাকার ব্যয়ের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। এটি কেবল মিথ্যাচার নয়, বরং ঐকমত্য কমিশন ও তার কার্যক্রমকে হেয় করার এক সংগঠিত ও পরিকল্পিত অপপ্রয়াস।

বিবৃতিতে কমিশন আরও জানিয়েছে, কমিশনের দায়িত্বকালীন সময়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে। সাংবাদিকরা কমিশন কার্যালয়ে অবাধে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন, সহসভাপতি ও সদস্যরা নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন ও ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে গণমাধ্যমের কাছে তথ্য উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে—যা স্বচ্ছতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

কমিশন আশা প্রকাশ করেছে, যেসব অসাধু মহল অসৎ উদ্দেশ্যে এই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তারা অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। একই সঙ্গে কমিশন বিশ্বাস করে যে দায়িত্বশীল গণমাধ্যমগুলো যাচাই করা ও সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করবে।

কমিশনের বিবৃতির বরাতে প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকেও বলা হয়েছে, “জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে কমিশনের আর্থিক হিসাব বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, তারা যেন যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো অসত্য তথ্য প্রচার না করে।”

কমিশন আরও উল্লেখ করেছে, কার্যক্রমের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোনো খাতে অনুমোদিত বাজেটের বাইরে ব্যয় করা হয়নি। প্রতিটি সভা, বৈঠক ও আপ্যায়ন সংক্রান্ত খরচ সরকার-নির্ধারিত আর্থিক বিধি অনুসারে সম্পন্ন হয়েছে।

অবশেষে কমিশন জানিয়েছে, ‘৮৩ কোটি টাকার ব্যয়’ প্রসঙ্গে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা শুধুমাত্র গণবিভ্রান্তি সৃষ্টি ও কমিশনের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অসৎ চেষ্টা। কমিশন জনগণের আস্থা ও সহযোগিতার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে অবিচল থাকবে বলে জানিয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়