News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:০২, ২১ অক্টোবর ২০২৫

একনেকে ১,৯৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

একনেকে ১,৯৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গ্রামীণ মাটির রাস্তা টেকসইকরণসহ মোট ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসবে ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা এবং সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

তবে হাওর ও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীল জীবনমান গড়ার উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প (CRLEP)’ আপাতত অনুমোদন পায়নি। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের আপত্তির ভিত্তিতে প্রকল্পটি কাঠামোগত পরিবর্তনের নির্দেশসহ ফেরত পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অসুস্থ থাকায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সভা শেষে প্রচলিত সংবাদ সম্মেলন করেননি।

সভায় অংশ নেন—আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী; শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৩টি, সংশোধিত প্রকল্প ৭টি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধি ৩টি।

আরও পড়ুন: ‘আগুনের সূত্রপাত ইমপোর্ট কুরিয়ার সেকশন থেকে হতে পারে’

১. কৃষি মন্ত্রণালয়: পিআরও-অ্যাক্ট বাংলাদেশ: রেজিলিয়েন্স স্ট্রেন্থেনিং থ্রু এগ্রি-ফুড সিস্টেমস ট্রান্সফর্মেশন ইন কক্সবাজার।

২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়: গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ (২য় পর্যায়) (প্রস্তাবিত ৩য় সংশোধন)।

৩. পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (৩টি): খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (৩য় সংশোধন), জামালপুর শহরের নগর স্থাপত্যের পুনঃসংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প (৩য় সংশোধিত), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ০১–০৫ নং জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)।

৪. গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়: উত্তরা লেক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।

৫. পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

৬. সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়: কিশোরগঞ্জ (বিন্নাটি)-পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর-টোক জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)।

৭. শিল্প মন্ত্রণালয়: বিএসটিআই’র পদার্থ ও রসায়ন পরীক্ষণ ল্যাবরেটরির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন।

৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়: ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প (২য় সংশোধিত)।

৯. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়: পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রূপান্তর।

১০. রেলপথ মন্ত্রণালয় (২টি): বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন (৪র্থ সংশোধিত), বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন (৫ম সংশোধিত)।

একনেক বৈঠকে আলোচনার সময় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু সহনশীলতার নামে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে আসল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইট-পাথর ও অবকাঠামো নির্মাণে, কিন্তু টেকসই জীবিকা উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের দিকটি উপেক্ষিত।

তার মতামতের ভিত্তিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়—হাওর অঞ্চলের প্রকৃত প্রয়োজন বিবেচনায় প্রকল্পের অবকাঠামোগত অংশ কমিয়ে জীবিকা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ উপাদান জোরদার করে পুনর্গঠিত রূপে প্রকল্পটি পুনরায় একনেকে উপস্থাপন করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩০৫ কোটি, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ঋণ ৮৫৪ কোটি, এবং ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ডানিডা অনুদান ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন সংস্থা ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের আওতায় ৩৩৪ কিলোমিটার সড়ক, ৫৮টি বাজার, ৩৪টি ঘাট, ৭২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৪৮০টি শৌচাগার, ৭২০টি নলকূপ নির্মাণ ও ৪০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ এবং ২০ হাজারকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল।

কিন্তু কমিশনের মূল্যায়নে দেখা যায়, প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় বরাদ্দ ছিল সড়ক, ঘাট, বাজার ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে—যা প্রকল্পের ‘জলবায়ু সহনশীলতা’ উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসঙ্গত।

এর আগে কালের কণ্ঠ প্রকাশ করেছিল প্রতিবেদন—‘জলবায়ু সহনশীলতার আড়ালে ইট-পাথরের প্রকল্প’। তাতে উল্লেখ করা হয়, এই প্রকল্পে অতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণ হাওর অঞ্চলের পানিপ্রবাহ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

একনেক সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাতিল নয়, বরং কাঠামোগত সংশোধনের পর পুনরায় অনুমোদনের সুযোগ থাকবে। 

পরিবেশ উপদেষ্টার ভাষায়, টেকসই উন্নয়নের পথে যেতে হলে প্রকৃতি ধ্বংস নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবিকা গড়ে তুলতে হবে।

  • অনুমোদিত প্রকল্প: ১৩টি
  • মোট ব্যয়: ১,৯৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা
  • সরকারি অর্থায়ন: ১,৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা
  • বৈদেশিক ঋণ: ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা
  • সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন: ৫০ কোটি টাকা
  • বাতিল নয়, কিন্তু ফেরত: জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়