News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৯ অক্টোবর ২০২৫

‘সেফ এক্সিট’ বিতর্কে মুখ খুললেন সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

‘সেফ এক্সিট’ বিতর্কে মুখ খুললেন সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

ফাইল ছবি

৭২ বছর বয়সে যদি আমাকে সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়— এমন মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ‘উপদেষ্টার রোজনামচা, চালকের হেলমেট নাই ও সেফ এক্সিট’ শিরোনামে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

ফাওজুল কবির খান লেখেন, গতকাল সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে আমি ট্রেনযোগে ভৈরব যাই। সঙ্গে ছিলেন যাতায়াত খাত বিশেষজ্ঞ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. মইনুদ্দিন, রেল ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জেলা ও উপজেলা পরিষদ ও পুলিশের কর্মকর্তারা।

তিনি জানান, ট্রেনে ওঠার আগে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন এবং যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

উপদেষ্টা লেখেন, সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ভৈরব পৌঁছে গাড়িতে করে ‘আশুগঞ্জ’ ট্রেন স্টেশন পরিদর্শন করি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, আশুগঞ্জ স্টেশনটির বেহাল অবস্থা ও নারী ও বয়োবৃদ্ধ যাত্রীদের জন্য স্টেশনে ওঠানামা কষ্টসাধ্য। “তাদের দাবি, স্টেশনটিকে পুনরায় বি-শ্রেণিভুক্ত করতে হবে। আমি রেলের মহাপরিচালককে সিগন্যালিংসহ স্টেশনের অন্যান্য ত্রুটি নিরসন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি,” বলেন ফাওজুল কবির খান।

ভৈরব পরিদর্শনের পর সরাইলের পথে যানজটে আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লেখেন, সাত-আট কিলোমিটার পথে এক ঘণ্টা অবস্থানের পরও অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমে পায়ে হেঁটে, পরে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দিই।

তবে মোটরসাইকেল চালকের হেলমেট না থাকার বিষয়টি নিয়ে তিনি জানান, চালক কিংবা যাত্রী কারও হেলমেট ছিল না। আট-দশটা মোটরবাইক খুঁজে একটিমাত্র হেলমেট পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি ও অপেক্ষার পরও চালকের জন্য হেলমেট না পেয়ে সবার পরামর্শে একমাত্র হেলমেটটি নিজে পরে রওনা দিই।

তিনি উল্লেখ করেন, হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছি এবং বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।

যানজট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সরাইল বিশ্বরোডে যানজটের মূল কারণ চৌরাস্তার নির্মাণকাজ হলেও চালকদের শৃঙ্খলাবোধের অভাব এবং হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের দুর্বল ব্যবস্থাপনাও দায়ী।

আরও পড়ুন: একাধিক পাসপোর্টধারীরাই ‘সেফ এক্সিট’ তালিকা করছে: আসিফ মাহমুদ

তিনি আরও জানান, ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ঠিকাদার চলে যাওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল, তবে এখন তারা ফিরে এসে কাজ শুরু করেছেন।

উপদেষ্টা বলেন, দুই লেনের মূল রাস্তার দুই পাশে অতিরিক্ত সার্ভিস লেন থাকলেও সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ডিভাইডারের স্থান ভেঙে ফেলায় কোথাও দুই লেন তিন-চার লেনে পরিণত হচ্ছে।

তিনি জানান, হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকলে এমন পরিস্থিতি হতো না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে, আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গেও কথা বলবো।

ফাওজুল কবির খান জানান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাস্তা সংস্কারে ছয়টি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নির্মাণকাজ তদারকির জন্য অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ ১২ জন কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদায়ন করা হয়েছে।

তিনি লিখেন, আমরা আশা করছি, দ্রুত এই রাস্তায় যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হবে।

পোস্টের শেষভাগে ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যু নিয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ফেরার পথে এক সাংবাদিক উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চান। বিষয়টি উত্থাপনকারী, প্রাক্তন উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন এবং জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসেবে শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তার বক্তব্যের ওপর মন্তব্য করা শোভন নয়। তাছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করি না।

নিজের দায়িত্বপালন প্রসঙ্গে তিনি লিখেন, উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমার রোজনামচা এমনই। গতকালও রাত আটটায় বাসায় ফিরেছি। নিজের পদে থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কাউকে ব্যবসা বা চাকরি দিই নাই।

তিনি যোগ করেন, নিজের সীমিত সামর্থ্যের সবটুকু ব্যবহার করে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছি। শিক্ষকতার সূত্রে পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ থাকলেও গ্রহণ করিনি।

সবশেষে দুঃখ প্রকাশ করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান লেখেন, তাই, আজ ৭২+ বছর বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়