News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:০৩, ১২ নভেম্বর ২০২৫

আশরাফুলের জবানবন্দি: এসি-ওসির নির্দেশে গুলিতে নিহত আবু সাঈদ

আশরাফুলের জবানবন্দি: এসি-ওসির নির্দেশে গুলিতে নিহত আবু সাঈদ

ফাইল ছবি

রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আরিফুজ্জামান এবং তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলামের নির্দেশে গুলি চালানোয় শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম।

বুধবার (১২ নভেম্বর) আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ১৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন তিনি। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এসআই আশরাফুল ইসলাম সাক্ষ্য দেন, তিনি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। ওই দিন সকাল ৮টায় তিনি ১৪ জন ফোর্স নিয়ে সরকারি গাড়িতে রংপুর বেরোবির সামনে পার্কের মোড়ে রওনা হন। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে হারাগাছ থানার ওসি (তদন্ত) নূর আলম ও পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র) খোরশেদ আলমের কাছে হাজির হন।

দুপুর ১টার দিকে লালবাগ থেকে ছাত্র-জনতার একটি মিছিল আসে। 

এসআই আশরাফুল জানান, তাদের সবাইকে বেরোবির এক নম্বর গেটের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয় এসি মো. আরিফুজ্জামান, এডিসি (ডিবি) মো. শাহ নুর আলম পাটোয়ারী এবং ওসি রবিউল ইসলাম। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতাকে আটকানোর নির্দেশ দেন এসি। একপর্যায়ে ছাত্রদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হলে উপস্থিত সকল ফোর্সকে হুইসেল, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে ১৯ আইনজীবীকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ঘোষণা

লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ হয় ছাত্র-জনতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটে উপস্থিত সিভিল পোশাকে প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত হয়। এরপর গ্যাসগান ইস্যুকৃত পুলিশ সদস্যদের গ্যাস ফায়ারের নির্দেশ দেন এসি আরিফুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন এডিসি শাহ নুর, তাজহাট থানার ওসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ বিভূতী ভূষণ রায়।

গ্যাসগান ফায়ারের পর ছাত্র-জনতা পুনরায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ছাত্ররা গেট ধাক্কাধাক্কি করে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে এসি, ওসি ও এডিসি পুলিশ সদস্যদের সামনের দিকে ডেকে শটগান ফায়ার করতে বলেন। এর ফলে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ছাত্রকে গুলিবিদ্ধ করা হয়। পরে আশপাশের ছাত্ররা তাকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। এরপরও ছাত্র-জনতার ওপর গ্যাসগান ফায়ার করা হয়।

বেলা পৌনে ৩টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুলিশের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট থেকে মডার্ন মোড়ে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৪টার দিকে এসআই আশরাফুল জানান, তারা জানতে পারেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ছাত্র আবু সাঈদ মারা গেছেন। রাত সাড়ে ৮টায় সরকারি গাড়িতে সবাইকে পুলিশ লাইনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।

এসআই আশরাফুলের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত চারজন আইনজীবী এবং উপস্থিত ছয়জনের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামীকাল (১৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম, সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

এই মামলায় গ্রেফতার ছয় আসামি হলেন এএসআই আমির হোসেন, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল, আনোয়ার পারভেজ সবাই উপস্থিত অবস্থায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন।

মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছিল গত ২৭ আগস্ট। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়