News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তান কখনো গোপন হামলা চালায় না: আইএসপিআর

পাকিস্তান কখনো গোপন হামলা চালায় না: আইএসপিআর

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে আফগান তালেবানের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। 

তালেবান কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, রাতে পাকিস্তান খোস্ত, কুনার ও পাকতিকা প্রদেশে হামলা চালিয়েছে এবং এতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। পাকিস্তান এই অভিযোগকে “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন” আখ্যা দিয়ে সরাসরি নাকচ করেছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ইসলামাবাদে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, পাকিস্তান কখনোই ঘোষণা ছাড়া হামলা চালায় না, এবং রাষ্ট্রীয় সামরিক পদক্ষেপ সবসময় প্রকাশ্যেই জানানো হয়।

আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, পাকিস্তানের সামরিক নীতিতে স্বচ্ছতা অপরিহার্য। তাই রাষ্ট্রীয় বাহিনী কোনো অভিযান পরিচালনা করলে তা গোপনে নয়, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমেই করা হয়।

তিনি জানান, দেশটি কখনোই বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় না—এ ধরনের অভিযোগ “দায়সারা ও অসত্য।”

জেনারেল চৌধুরী আরও পরিষ্কার করে বলেন, পাকিস্তানের কাছে “ভালো তালেবান” বা “খারাপ তালেবান” বলে কোনো শ্রেণিবিন্যাস নেই; সন্ত্রাসী হলো সন্ত্রাসী—এখানে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি এক ও অভিন্ন।

আফগান তালেবান সরকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইএসপিআর প্রধান বলেন, অভিযোগ তোলার আগে আন্তঃরাষ্ট্রীয় আচরণ ও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আফগান নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি একটি রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করতে চায়, নাকি অ-রাষ্ট্রীয় সত্তা হিসেবে। 

একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, আর কতদিন আফগানিস্তান ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ পরিচয়ে চলবে?

তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, সীমান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখতে আফগান ভূখণ্ডে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তালেবান প্রশাসনকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।

আইএসপিআর মহাপরিচালকের মতে, পাকিস্তান নিজ ভূখণ্ডে বারবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে, যেগুলোর পরিকল্পনা ও রসদ আফগান ভেতর থেকে এসেছে বলে ইসলামাবাদের অভিযোগ। তাই আফগানিস্তানকে তার সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি আরও জানান, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ ও যৌথ কৌশল জরুরি। 

অভিযোগ বা আবেগ দিয়ে সীমান্ত নিরাপত্তা পরিচালিত হয় না, মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা, ৯ শিশুসহ নিহত ১০

ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী দেশীয় নিরাপত্তার একটি দিকও তুলে ধরেন—নন-কাস্টম-পেইড (এনসিপি) গাড়ি। 

তার দাবি, এসব গাড়ি প্রায়ই সন্ত্রাসী হামলা ও অপরাধে ব্যবহৃত হয়। তাই এগুলো দ্রুত নিষিদ্ধ করা জরুরি।

সাম্প্রতিক অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে আস্থা সংকট আরও বাড়াতে পারে বলে আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে—তারা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাই “রাতে” বা “গোপনে” হামলার অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

অন্যদিকে, আফগান তালেবান দাবি করছে পাকিস্তানের হামলায় তাদের নাগরিক নিহত হয়েছে।

উভয় দেশের এই বিপরীত অবস্থান কূটনৈতিক ক্ষেত্রকে আরও জটিল করতে পারে। 

তবে আইএসপিআর প্রধানের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, পাকিস্তান এখনো আলোচনার পথ খোলা রাখতে চায়—শর্ত হলো, আফগান পক্ষকে রাষ্ট্রীয় আচরণ ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করতে হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়