শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধিমালা জারি
ফাইল ছবি
দেশে ক্রমবর্ধমান শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে অবশেষে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ হালনাগাদ করে ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এর মাধ্যমে পূর্বের বিধিমালায় থাকা নানা সীমাবদ্ধতা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনার অভাব দূর করে নতুন চাহিদা, বাস্তবতা এবং প্রযুক্তিগত বিবেচনা যুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নতুন এই বিধিমালা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
২০০৬ সালের বিধিমালায় কেবল ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা প্রদান থাকায় সীমিত জনবল দিয়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে নতুন বিধিমালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে ট্রাফিক পুলিশের ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
- ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট পদমর্যাদার নিম্নে নহেন এমন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলেই জরিমানা আরোপ করতে পারবেন।
- কার্যক্রম: যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত পুলিশ কর্মকর্তার সম্মুখে বিধি ৬ এর উপ-বিধি (২), (৩) বা (৪) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তবে তিনি জরিমানা করতে পারবেন।
কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এ উদ্যোগ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে নতুন গতি আনবে এবং কার্যকর তদারকি নিশ্চিত হবে।
শব্দদূষণের অন্যতম বড় উৎস হর্ন এবং জনপরিসরে মাইক-লাউডস্পিকারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধিমালায় কঠোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে:
- হর্ন নিয়ন্ত্রণ: পূর্বের বিধিতে হর্ন আমদানি, উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি সংক্রান্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছিল না। ২০২৫-এর বিধিমালায় এ বিষয়ে স্পষ্ট শাস্তির বিধান যুক্ত হওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত হর্ন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হবে।
- লাউডস্পিকার ও মাইক: কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো পাবলিক প্লেস বা জনপরিসরে লাউডস্পিকার, মাইক, অ্যাম্প্লিফায়ার ও সুরযন্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রথমবার বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির পদক্ষেপ
নতুন বিধিমালায় জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও নগর জীবনের মানোন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা যুক্ত হয়েছে:
- সামাজিক অনুষ্ঠান: যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে শব্দসীমা ৯০ ডেসিবল (dB) নির্ধারণ এবং অনুষ্ঠান রাত ৯টার মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা।
- নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা: নীরব এলাকায় পটকা, আতশবাজি, হর্ন বা অনুরূপ শব্দসৃষ্টিকারী যেকোনো পণ্য ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- নির্মাণ কাজ: রাত্রিকালে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশনা।
- প্রাকৃতিক এলাকা: প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলে বনভোজন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
- শিল্প ও জেনারেটর: শিল্পকারখানা ও জেনারেটরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধান ও মানদণ্ড সংযোজন করা হয়েছে।
- দণ্ড নির্ধারণ: সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন বিধিমালা প্রণয়নের পূর্বে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রথমে অংশীজনদের নিয়ে সভা ও কর্মশালার মাধ্যমে খসড়া প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে সকল মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করা হয় এবং জনগণের মতামতের জন্য খসড়াটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়।
এছাড়া, বিভিন্ন দেশের বেস্ট প্র্যাকটিস পর্যালোচনা করে ২০০৬ সালের বিধিমালার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং বাস্তবতার নিরিখে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংযোজন করে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
এই কঠোর ও সমন্বিত আইনি কাঠামো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশে শব্দদূষণের ভয়াবহতা কমে আসবে বলে আশা করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








