প্রথমবার বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির পদক্ষেপ
ফাইল ছবি
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) রাজধানীর বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালার অধিকার নিয়ে প্রথমবারের মতো গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করছে। আগামী ২৭ নভেম্বর দুপুর দেড়টায় গুলশান-২ এ অবস্থিত নগর ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
ডিএনসিসির সচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, বৈঠকে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের হার, বার্ষিক বৃদ্ধির ধারা এবং ভাড়াটিয়া–বাড়িওয়ালার মধ্যে চলমান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ডিএনসিসির ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।
রাজধানীতে প্রতি বছরের শুরুতে ভাড়া বাড়ানো এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কোনো সরকারি নীতিমালা না থাকায় মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়ান। এ অবস্থায় ভাড়াটিয়াদের চাপ কমাতে ডিএনসিসি প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে ঢাকায় বাসা ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় বাসা ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়—
- ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যয় করেন ভাড়ায়
- ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের অর্ধেক ব্যয় করেন ভাড়ায়
- ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত ব্যয় করেন ভাড়ায়
আরও পড়ুন: ৬৪ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হচ্ছে ঢাকায়
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২৩ সালের খাদ্যনিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
- সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে ৭২ শতাংশই ভাড়া বাসায় থাকেন
- নিজের বাসায় থাকেন মাত্র ২৫.৮৫ শতাংশ
- অন্যান্য শহরে ভাড়ায় থাকেন ১৮ শতাংশ মানুষ
- ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে শহরে বাসা ভাড়া বেড়েছে ৫.৮৯ শতাংশ
দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। এর মধ্যে গ্রামে ৩.৯৩ শতাংশ, শহরে ১৭.৯৯ শতাংশ এবং সিটি কর্পোরেশনে ৭২.০৭ শতাংশ।
ঢাকায় বর্তমানে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। প্রতি বছর নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৬ লাখ ১২ হাজার মানুষ—অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১,৭০০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্বে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শহর, যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন প্রায় ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ।
ডিএনসিসির ফেসবুক পোস্টে অনেক নাগরিক মন্তব্য করেছেন।
কেউ কেউ দাবি করেছেন, এলাকা ভিত্তিক স্কয়ার ফিট অনুযায়ী সরকারি ভাড়া নির্ধারণ করা হোক। আবার কেউ বলেছেন, নীতিমালা থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হলে ভাড়াটিয়াদের দুর্ভোগ কমবে না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এই বৈঠককে রাজধানীর ভাড়া নিয়ন্ত্রণে প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। লাগামহীন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ভাড়াটিয়াদের জীবনযাত্রা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। জনসংখ্যার চাপ, নীতিমালার অভাব এবং বাজারের অস্বাভাবিক প্রবণতা মিলিয়ে এ বৈঠক নগরবাসীর প্রত্যাশা ও উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








