যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৪, আহত ৮৭
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতির মধ্যেও নতুন করে তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
শনিবার (২২ নভেম্বর) উত্তর ও কেন্দ্রীয় গাজায় চালানো এসব হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন ও স্থানীয় চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে, বেশিরভাগ হামলাই চালানো হয়েছে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনপক্ষ।
শনিবার সকালে প্রথম হামলাটি হয় উত্তর গাজা সিটির একটি গাড়িতে। তার কিছু পরেই মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এবং নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়। গাজা সিটির রিমাল এলাকায় ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আল-শিফা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রামি মোহান্না। দেইর আল-বালাহর একটি বাড়িতে হামলায় এক নারীসহ তিনজন নিহত হন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে এবং ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারদিক।
হামাস অভিযোগ করেছে, এসব হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করছে এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরকে—তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের দাবি, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ইয়েলো লাইন’ নামের নিয়ন্ত্রিত সীমারেখা অতিক্রম করে পশ্চিমমুখী অগ্রসর হয়েছে, যা চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন।
হামাস সতর্ক করেছে, এই ধরনের হামলা অব্যাহত থাকলে যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় অন্তত ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত: ইউনিসেফ
অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ‘ইয়েলো লাইন’ অমান্য করে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারাই প্রথমে তাদের ওপর হামলা চালায়, এবং এর প্রতিক্রিয়ায় রাফাহ অঞ্চলে তিন হামাস সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, গাজার ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামাসের এক যোদ্ধার আক্রমণের জবাবেই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
তাদের দাবি, সাম্প্রতিক অভিযানে হামাসের পাঁচজন সিনিয়র যোদ্ধা নিহত হয়েছে, যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি হামাস।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল কমপক্ষে ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যেখানে নিহত হয়েছেন ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক—যাদের বেশিরভাগই শিশু, নারী ও বয়স্ক।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, ধারাবাহিক লঙ্ঘন ও অব্যাহত বিমান হামলা শুধু নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেই নাজুক করে তোলেনি, বরং মানবিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে।
ইসরায়েলি নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি হামাসকে নিরস্ত্র করার প্রক্রিয়ায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না দেখাতে পারে, তাহলে তেল আবিব আবারও পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে—যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও হামাস নিরস্ত্রীকরণের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। বাস্তবে টানা ছয় সপ্তাহ ধরে আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ায় মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে যুদ্ধবিরতি পুনরুদ্ধারে।
গাজার হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়েছে। আহতদের অনেককে মাঠ পর্যায়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, যুদ্ধবিরতি নামমাত্র আছে—বাস্তবে প্রতিদিনই আকাশে ড্রোন আর যুদ্ধবিমান ঘুরছে; কোথাও নিরাপদ নেই কেউ।
আন্তর্জাতিক মহল এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা পুনর্নিশ্চিত করতে না পারলে অঞ্চলটি আবারও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








