কড়া নিরাপত্তায় ১৩ সামরিক কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনাল হাজির
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা ‘আয়নাঘর’-এ গুম, নির্যাতন ও খুনের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি পৃথক মামলায় কারাগারে থাকা ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) আদালতের আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই মামলার শুনানি পরিচালনা করবেন।
অন্যান্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশন গত ৮ অক্টোবর পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করে। এরপর ২২ অক্টোবর আদালতে আসামিদের হাজির করা হয় এবং শুনানি শেষে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য ছিল, তবে আবেদন গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে আজ ২৩ নভেম্বর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের মামলায় মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান, খায়রুল ইসলাম ও জুয়েল নামে র্যাব কর্মকর্তা রয়েছেন। এদের মধ্যে ২২ অক্টোবর ১০ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মেজর সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায়
অন্যদিকে জেআইসি বা আয়নাঘরে গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপর একটি মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলাতেও শেখ হাসিনার নাম রয়েছে।
অন্যান্য আসামিরা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী এবং লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।
বর্তমানে কারাবন্দি থাকা ১৩ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী।
আজকের শুনানিতে হাজিরা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি পলাতক আসামিদের জন্য স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরকরণ এবং কারাগারে রাখার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মামলার পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিচারিক প্যানেলের নজরে রয়েছে।
এই মামলাগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন হিসেবে ধরা হচ্ছে। ২৩ নভেম্বরের হাজিরা এবং শুনানি বাংলাদেশের বিচারপ্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে ট্রাইব্যুনাল এলাকা ও আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








