‘এ মাসে ২০ বার কেঁপে উঠতে পারে দেশ’
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক দু’দিনে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা চারবার কম্পনের সঙ্গে কেঁপে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ মাসে আরও কমপক্ষে ২০ বার ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, যদি ৫.৭ মাত্রার চেয়ে বড় কোনো কম্পন আসে, তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপর্যয় হতে পারে। বিশেষ করে নরসিংদী এবং এর আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ।
শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দুইটি নতুন ভূমিকম্প হয়েছে, যার কম্পন অনুভূত হয়েছে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায়। একটির উৎপত্তিস্থল বাড্ডা, আরেকটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদী। দুটি ভূমিকম্পই মাত্র দুই সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এর ফলে গত সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় ঢাকা ও এর আশপাশে চারবার কম্পন অনুভূত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত মূল ভূমিকম্পের সময় অনেকেই আতঙ্কে ঘরের বাইরে বের হন। কিছু ভবন হেলে পড়ে এবং ফাটল দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ তিনটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত — ভারতীয়, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা-প্লেট।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রুবাইয়াত কবির জানান, বর্তমানে এই প্লেটগুলো “অটকে থাকা অবস্থায় থেকে খুলে যাচ্ছে।” ভারতীয় প্লেটের ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটলে বাংলাদেশ মারাত্মক ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে পড়বে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি গোপন ভূ-চ্যুতি (ফল্ট) শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ‘মেগাথার্স্ট ফল্ট’ শনাক্ত করা হয়েছিল, যা মাইলজুড়ে বিস্তৃত।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে উচ্চ ঝুঁকিতে সিলেট-ঢাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভূতত্ত্ববিদ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট সংযোগস্থলে গত ৮০০–১০০০ বছরে জমে থাকা শক্তি মুক্ত হয়নি।
বুয়েটের অধ্যাপক আনসারী সতর্ক করেছেন, আগামী এক সপ্তাহে আরও ২০ বার ছোট বা মাঝারি মাত্রার কম্পন হতে পারে।
তিনি বলেন, “নরসিংদী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল রয়েছে। এটি ভবিষ্যতের বড় দুর্যোগের ইঙ্গিত।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আ স ম ওবায়দুল্লাহ জানান, ঘোড়াশালের ফাটল থেকে সংগৃহীত মাটির নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে ভূমিকম্পের গভীরতা এবং প্রকৃতি নির্ধারণ করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা অতীতের তথ্যও স্মরণ করিয়ে দেন। টেকনাফ-মিয়ানমার ফল্ট লাইনে ১৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার উপরে উঠে এসেছিল। বর্তমান সময়ে সেখানে নতুন শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভূমিকম্পের সম্ভাবনা মোকাবিলায় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে রাজধানীসহ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানুষদের।
তাদের সুপারিশ:
- পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পুনঃমূল্যায়ন এবং নিরাপদকরণ।
- সাধারণ মানুষের মধ্যে ভূমিকম্প সচেতনতা বৃদ্ধি।
- জরুরি উদ্ধার ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা।
- ফল্ট লাইনের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি করা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় কম্পন, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা এবং অতীতের ভূমিকম্পের তথ্য মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি অবহেলা করার নয়। এখনই সময় জরুরি প্রস্তুতি, জনসচেতনতা এবং পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়ার।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








