নেতানিয়াহু মঞ্চে ওঠা মাত্রই বেরিয়ে গেলেন বিশ্বের শতাধিক কূটনীতি

ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক কূটনীতিক বিক্ষোভের কারণে সভাকক্ষ ত্যাগ করেছেন।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা ও গণহত্যা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ ও ‘ওয়াক আউট’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরা এবং দ্য টাইমস অব ইসরাইল ও মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু মঞ্চে উঠলে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা দ্রুত তাদের আসন ছেড়ে বেরিয়ে যান।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কেবল আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারাই নয়, আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশের কূটনীতিকরাও সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। বেরিয়ে যাওয়ার পথে ভিড় সৃষ্টি হয়। যদিও মার্কিন প্রতিনিধি দল করতালির মাধ্যমে নেতানিয়াহুকে সমর্থন জানায়, ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ পরে উপস্থিত ছিলেন।
নেতানিয়াহু তার বক্তব্যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন এবং গাজা ও লেবাননে অভিযান চালানোর সাফল্য তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইতিহাসের অন্যতম বড় সামরিক সাফল্য অর্জন করেছে, তবে গাজায় এখনও হামাসের যোদ্ধারা রয়েছেন। তাদের নির্মূল করতে আরও সময় লাগবে। এটি আমরা করব।
বুধবার (৭ অক্টোবর) হামাসের হামলার কথা উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, বিশ্ববাসী হয়তো এটি ভুলে গেছে, কিন্তু ইসরায়েলিরা কখনও ভুলবে না।
তিনি হামাসকে আরও হুমকি দেন এবং জিম্মিদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে শত শত জেনারেল-অ্যাডমিরালকে জরুরি তলব যুক্তরাষ্ট্রের
এছাড়াও নেতানিয়াহু গাজার মানুষের কাছে তার বক্তব্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য সীমান্তে লাউড স্পিকার বসিয়েছেন এবং গাজাবাসীর মোবাইল ফোনেও বক্তব্য সম্প্রচার নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি জিম্মিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, যদি হামাস অস্ত্রফেলা করে এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তবে যুদ্ধ এখনই শেষ হবে। যুদ্ধের পর গাজা থেকে অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া হবে এবং সেখানে একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হবে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের পর থেকে অন্তত ২,৩৮,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত, আহত বা নিখোঁজ হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও বিদ্যালয়। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৮০ শতাংশ সাধারণ নাগরিক ছিল। যুদ্ধের ফলে প্রায় পুরো জনগোষ্ঠী অন্তত একবার হলেও গৃহহীন হয়েছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তিনি দায়ী।
সভায় নেতানিয়াহু তার বক্তব্যের সময় “দ্যা কার্স” শিরোনামের মানচিত্র প্রদর্শন করেন, যেখানে ইরান, ইয়েমেন, লেবানন ও সিরিয়ায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেসব শত্রু নেতাকে ধ্বংস করা হয়েছে, সেই স্থানগুলো কালো মার্কারে চিহ্নিত ছিল।
তিনি পশ্চিমা নেতাদের ফিলিস্তিনকে ‘উন্মাদভাবে’ স্বীকৃতি দেওয়ার সমালোচনা করেন।
নেতানিয়াহু জুন মাসে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের পাইলটদের সাফল্য প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা প্রতিহত করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘের অধিবেশনের বক্তৃতা তালিকায় পাকিস্তান, চীন, আয়ারল্যান্ড, গ্রিসসহ বহু দেশ রয়েছে। অন্যান্য বক্তারা ইসরায়েলের হামলার কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং গাজায় যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি