News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে শত শত জেনারেল-অ্যাডমিরালকে জরুরি তলব যুক্তরাষ্ট্রের

বিশ্বজুড়ে শত শত জেনারেল-অ্যাডমিরালকে জরুরি তলব যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ হঠাৎ করেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্বে থাকা মার্কিন সামরিক বাহিনীর শত শত জেনারেল ও অ্যাডমিরালকে এক জরুরি বৈঠকে অংশ নিতে তলব করেছেন। আগামী সপ্তাহে ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকো মেরিন কর্পস ঘাঁটিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পেন্টাগন, তবে আলোচ্যসূচি স্পষ্ট করা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র শন পারনেল জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ আগামী সপ্তাহের শুরুতেই জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। 

তবে বৈঠকের নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর পারনেল শুধু বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই যুদ্ধমন্ত্রী তার জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি এটা ভালোবাসি। আমার কাছে দারুণ মনে হচ্ছে। জেনারেল আর অ্যাডমিরালদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা ভালো। জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের একসঙ্গে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা গুরুত্ব দেননি ট্রাম্প। 

সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, এটা এত বড় ব্যাপার কেন? আমরা যদি জেনারেল আর অ্যাডমিরালদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখি, এতে ক্ষতি কোথায়? আমি তো শান্তির প্রেসিডেন্ট। সম্পর্ক ভালো থাকা ভালোই।

ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও সমালোচনাকে গুরুত্বহীন হিসেবে দেখছেন। 

তিনি বলেন, যেসব জেনারেল প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করেন, তাদের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাটা অস্বাভাবিক নয়। সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, সেটাই বরং অদ্ভুত।

মার্কিন সামরিক বাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ৮০০ জেনারেল ও অ্যাডমিরাল রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে হাজার হাজার সেনার নেতৃত্বে আছেন এবং সংবেদনশীল বিদেশি ঘাঁটির দায়িত্বে রয়েছেন। সাধারণত এ ধরনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সময়সূচি অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। ফলে একসঙ্গে এত বড় পরিসরে বৈঠকে ডাকাকে “অত্যন্ত অস্বাভাবিক” বলছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেবেন না: ট্রাম্প

একজন সামরিক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, এখন সবাই তাদের সময়সূচি বদলাতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং ভাবছেন তাদের সেখানে যাওয়া বাধ্যতামূলক কি না। 

অন্য এক কর্মকর্তা পলিটিকোকে জানান, যা কিছু আলোচনা করা হবে, তা নিরাপদ ইমেইল, ফোনকল বা ভিডিও লিংকের মাধ্যমেই জানানো সম্ভব। এত শীর্ষ কর্মকর্তাকে এক জায়গায় ডাকার দরকার কী?

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হেগসেথ পেন্টাগনের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনছেন। এ পর্যন্ত এক ডজনের বেশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল চার্লস কিউ. ব্রাউন জুনিয়র এবং নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল লিসা ফ্রানচেট্টি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হেগসেথ প্রতিরক্ষা দপ্তরে রদবদল শুরু করেছেন। মে মাসে ট্রাম্প চার-তারকা জেনারেলের সংখ্যা ২০ শতাংশ এবং পুরো সেনাবাহিনীতে জেনারেল ও ফ্ল্যাগ অফিসারের সংখ্যা ১০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেন। হেগসেথ বহুত্ববাদ বা বৈচিত্র্য বিষয়ক উদ্যোগও বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। 

তার মতে, সেনাবাহিনীকে এখন “প্রাণঘাতী শক্তি বৃদ্ধি” এবং “যোদ্ধা মনোভাব পুনরুদ্ধারে” মনোযোগী হতে হবে।

সম্প্রতি পেন্টাগন দুটি বড় নীতিগত পর্যালোচনা শেষ করেছে। এর একটি হলো নতুন জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল, যাতে সামরিক অগ্রাধিকার চীন থেকে সরিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও পশ্চিম গোলার্ধে দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, কোয়ান্টিকোর বৈঠকে হেগসেথ এ কৌশলের খসড়া উপস্থাপন করবেন এবং তার “কম জেনারেল, বেশি জিআই” নীতি ব্যাখ্যা করবেন।

চলতি মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিরক্ষা দপ্তরকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ বা যুদ্ধ দপ্তর হিসেবে উল্লেখ করার নীতি ঘোষণা করেন। ১৯৪৯ সালের আগে পর্যন্ত এই নামেই সংস্থাটি পরিচিত ছিল। তবে স্থায়ীভাবে নাম পরিবর্তনে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ট্রাম্প এ পরিবর্তনকে তুচ্ছ করে বলেছেন, এটি কেবল একটি “বন্ধুসুলভ” সমাবেশ।

ট্রাম্প ও হেগসেথ পেন্টাগনে তথ্য নিয়ন্ত্রণও আরও কঠোর করেছেন। নতুন এক নির্দেশনায় সাংবাদিকদের সতর্ক করা হয়েছে, অনুমোদনবিহীন তথ্য প্রকাশ করলে তাদের প্রেস অনুমতি বাতিল হতে পারে। 

সমালোচকদের উদ্দেশে হেগসেথ বলেন, পেন্টাগন পরিচালনা করে প্রেস নয়—জনগণ।

সাধারণত জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ ও কমব্যাট কমান্ডাররা বছরে দু’বার ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন। তবে শত শত কর্মকর্তা—যাদের অনেকেই সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রের দায়িত্বে—এভাবে সমবেত হওয়ার ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন। এ কারণে সামরিক পর্যায়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যদিও হোয়াইট হাউস ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠকটিকে স্বাভাবিক ও ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়