তথ্যহীন অভিযোগে ইরানের ওপর হামলা

আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল একপক্ষীয়ভাবে ইরানে ভয়াবহ হামলা চালায়। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে “পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের ছল” বলে দাবি করে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়। হামলায় প্রাণ হারান ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বহু সাধারণ নাগরিক। আন্তর্জাতিক মহলে এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দাবি করেন যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, এবং এখন এটা রোধ করা জরুরি।
তবে এসব দাবির পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ (IAEA) জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমে এখনো পর্যন্ত কোনো সামরিক উদ্দেশ্য বা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কার্যক্রমের প্রমাণ পায়নি।
১৩ জুন এক বিবৃতিতে আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, কে সঠিক, কে ভুল—তা নিয়ে এখন একটা প্রতিযোগিতা চলছে। ইরান হয়তো পর্যাপ্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত রেখেছে, কিন্তু সেটিকে কার্যকর পারমাণবিক অস্ত্রে রূপান্তর করতে আরও উন্নত প্রযুক্তি, জটিল পরীক্ষা এবং সময় প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আমরা অতীতে কিছু কার্যকলাপ পেয়েছি, যেগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে বর্তমানে এমন কোনো উপাদান বা অবকাঠামো পাওয়া যায়নি।
১৪ জুন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা-কে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, আমাদের সংস্থার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যা প্রমাণ করে যে ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
আরও পড়ুন: ইরান প্রশ্নে ট্রাম্পের সময়সীমা ২ সপ্তাহ
তিনি যুক্ত করেন, পর্যবেক্ষক দল ইরানে এমন কিছু দেখতে পায়নি যা থেকে ধারণা করা যায় যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির পেছনে কোনো সংগঠিত অস্ত্র নির্মাণ পরিকল্পনা কাজ করছে।
যদিও গ্রোসি অস্ত্র নির্মাণের প্রমাণ না থাকার কথা বলেছেন, তবুও ৭ জুন আইএইএর বোর্ড অব গভর্নরস ইরানকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরাপত্তা চুক্তি লঙ্ঘনের দায়ে “নন-কমপ্লায়েন্ট” ঘোষণা করে।
বোর্ড জানায়, ইরান বারবার তাদের গোপন পারমাণবিক কার্যক্রম ও উপকরণ সম্পর্কে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছু অনাবিষ্কৃত স্থানে ইউরেনিয়ামের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যার ব্যাখ্যাও সন্তোষজনক নয়।
এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ে, যদিও ইরান একে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহী “ বলে প্রত্যাখ্যান করে।
হামলার পর ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আইএইএ যদি ইসরায়েলের এই আগ্রাসী হামলার নিন্দা না করে, তাহলে তেহরান সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা সীমিত করবে।
ইরান স্পষ্ট জানায়, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বৈধভাবে পরিচালিত।
ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের দাবি—ইরান পরমাণু বোমার কাছাকাছি।
আইএইএ’র পর্যবেক্ষণে—সেই দাবির কোনো প্রযুক্তিগত বা বাস্তব প্রমাণ নেই।
আইএইএ বোর্ডের ‘নন-কমপ্লায়েন্ট’ সিদ্ধান্ত—কৌশলগত সন্দেহ এবং রাজনৈতিক চাপের ইঙ্গিত দেয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, যেখানে একটি জাতিসংঘ-স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা এক ধরনের তথ্য দিচ্ছে, আর অঞ্চলীয় শক্তিগুলো তার বিপরীতে গিয়ে সামরিক হামলা চালাচ্ছে। ১৩ জুনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে—যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে “তথ্য বনাম অভিযোগ” দ্বন্দ্ব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি