গাজায় নিহত ৬৯ হাজার ছাড়াল, পশ্চিম তীরে সহিংসতা তীব্র
ছবি: সংগৃহীত
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৫ জন।
শনিবার (০৮ নভেম্বর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। খবর আলজাজিরা ও আরব নিউজ।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত মাসে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ২৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ৭২ ঘণ্টায় আরও ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারের বেশি মানুষ আটকে আছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় নিখোঁজ ব্যক্তিদের কমিটি।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় দুই লাখ টন বোমা ফেলেছে, যার মধ্যে ৭০ হাজার টন এখনো বিস্ফোরিত হয়নি।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস গাজায় আটক থাকা শেষ ২০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি ও ১ হাজার ৭১৮ জন আটককে মুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ৩০০ ফিলিস্তিনি শহীদের মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৮৯ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ফেরত আসা অনেক মৃতদেহে অঙ্গহানি ও নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব নিহতের কিছু দক্ষিণ অধিকৃত ফিলিস্তিনের সাদে তেইমান বন্দিশিবির থেকে এসেছে, যেখানে আটক ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় ভয়াবহ দূষিত পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পুকুরে ময়লা-আবর্জনা জমে আশপাশের বসতি ও আশ্রয়শিবিরে ছড়িয়ে পড়ছে। পাম্প স্টেশন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পানির স্তর ৬ মিটার পর্যন্ত বেড়ে গেছে, যা মারাত্মক দুর্গন্ধ, মশা ও সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ভূগর্ভস্থ পানির বেশির ভাগ অংশই এখন মারাত্মকভাবে দূষিত।
আরও পড়ুন: গাজায় ত্রাণ আটকে দিচ্ছে ইসরায়েল: জাতিসংঘের অভিযোগ
ইসরায়েলি সেনারা এখনো সীমারেখার কাছে যাওয়া সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘হলুদ রেখা’ পেরিয়ে সেনাদের কাছে পৌঁছে যাওয়া এক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলেও একইভাবে আরেকজন নিহত হয়েছেন। খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রাফাহ সীমান্ত আবার খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ফিলিস্তিনি রোগী রাফাহ হয়ে মিসর ও অন্যান্য দেশে গেছেন চিকিৎসার জন্য। তবে আরও ১৬ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।
একই সময়ে পশ্চিম তীরেও সহিংসতা বেড়েছে। জেনিনের রাবা গ্রামে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা সেনাদের সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিম তীরে ৭০টি গ্রামে ১২৬টি সহিংস হামলা ঘটেছে, যাতে চার হাজারের বেশি জলপাই গাছ পুড়ে গেছে।
শনিবার নাবলুসের দক্ষিণে বেইতা শহরে জলপাই তুলতে যাওয়া কৃষক, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় একদল ইসরায়েলি বসতকারী। ইসরায়েলি বর্ণবৈষম্যবিরোধী কর্মী জোনাথন পোলাক জানান, মুখোশধারী বসতকারীরা লাঠি ও পাথর নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, হামলায় পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সংগঠনটি হামলাটিকে ‘সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের দুই কর্মী—একজন সাংবাদিক ও তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা উপদেষ্টা—এই হামলায় আহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পরও গাজায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না। ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল ও বসতি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেই এসব হামলা চলছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








