News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৭ নভেম্বর ২০২৫

‘নির্বাচনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত ইসি’

‘নির্বাচনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত ইসি’

ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

কমিশনের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আব্দুর রহমানেল বলেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে ইসির এখন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী বিদেশ থেকে আনা ভোটের কালি এসে পৌঁছেছে, যা নির্বাচন প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভোটের আগে প্রয়োজনীয় প্রায় সব মৌলিক কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, বরং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই ভোটের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের মাঠে সক্রিয়তা বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আসন্ন নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, নির্বাচিত সরকার ও গণতান্ত্রিক ধারার প্রবর্তন ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এবারের নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের কারণে জনগণের মধ্যে যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে ওঠাই এবারের কমিশনের প্রধান লক্ষ্য। ভালো নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই। জাতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এবারের ভোটকে জনগণের জন্য উৎসবে পরিণত করাই আমাদের লক্ষ্য।

ইসি সচিবালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ, আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ মৌলিক প্রস্তুতির সবকিছুই নভেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। ডিসেম্বরের শুরুতেই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে।

ইসি সূত্র অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৩৮২ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ২৩০ জন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে ভোটার বেড়েছে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৮৮০ জন।

আরও পড়ুন: ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে বিভ্রান্তি: সরকার বলছে ‘সর্বৈব মিথ্যাচার

ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এর আগে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকবে।

নির্বাচনী আইন সংশোধনের কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ইসি। গত ৩ নভেম্বর সরকার ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর গেজেট প্রকাশ করেছে। এতে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু যুগান্তকারী বিধান:

  • আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি প্রার্থী হতে পারবেন না।
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ড) অন্তর্ভুক্ত।
  • একক প্রার্থীর আসনে ‘না ভোট’ পুনরায় চালু।
  • সমান ভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনঃভোট।
  • জোটগত নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে ভোট বাধ্যতামূলক।
  • নির্বাচনী জামানত নির্ধারণ: ৫০ হাজার টাকা।
  • আচরণবিধি লঙ্ঘনের সর্বোচ্চ শাস্তি: দেড় লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড।
  • অনিয়ম প্রমাণিত হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে।
  • আইটি সাপোর্টে পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি যুক্ত।
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে অনিয়ম হলে তা নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য।
  • হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে নির্বাচনের পরও ব্যবস্থা নিতে পারবে ইসি।

নতুন তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলগুলো হলো— জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি। এনসিপিকে ‘শাপলা কলি’, সমাজতান্ত্রিক দলকে ‘কাঁচি’ এবং আম জনগণ পার্টিকে ‘হ্যান্ডশেক’ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। নিবন্ধন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দাবি-আপত্তি জানানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইসি চূড়ান্তভাবে দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে। পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি কক্ষসহ মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এবার প্রথমবারের মতো পোস্টাল ভোটিংয়ের সুযোগ থাকছে। এ লক্ষ্যে ‘পোস্টাল ভোট রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ’ চালু করা হচ্ছে, যা উদ্বোধন করা হবে ১৬ নভেম্বর। ইসি সচিব জানিয়েছেন, অ্যাপে নিবন্ধন করে প্রবাসী ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। নিবন্ধন প্রক্রিয়া কতদিন খোলা থাকবে, তা উদ্বোধনের সময় জানানো হবে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপ শুরু হতে পারে। সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানো হবে।

আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আমরা চাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক উৎসবে পরিণত হোক। জনগণ যেন স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে— এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়