‘অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন’
ফাইল ছবি
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আপিল শুনানিতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যকরের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে দ্বিতীয় দিনের মতো রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে এসব মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এর আগে বুধবার প্রথম দিনের শুনানিতে তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে এদিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় বহাল থাকা উচিত হবে না। রায় পরিবর্তন করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মৌখিক এবং লিখিত রায়ের মধ্যে জালিয়াতি করেছেন, যা ফৌজদারি অপরাধ। তার সাত বছর সাজা হওয়া উচিত।
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন বিএনপি, জামায়াতসহ পাঁচ পক্ষের নয়জন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার।
আরও পড়ুন: জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে কিছুই বাধা হতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গত ২৭ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেয়। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক শুনানি। বৃহস্পতিবার ছিল এই শুনানির নবম দিন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে কোহিনূর হীরার মতো মূল্যবান, যেটাকে রক্ষার জন্য সংবিধানে যা প্রয়োজন সেভাবে সংশোধন করতে হবে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বিগত সময়ে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। সেই সাথে আমলাতন্ত্র ও আইনের শাসন ভেঙে পড়ে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষায় প্রয়োজন অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে সংবিধানে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পেছনে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভ্রান্তপ্রসূত বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, ‘গুড’-এর বিপরীতে ‘ব্যাড’ শব্দের চেয়েও যদি ভয়াবহ কোনো শব্দ থাকে, তাহলে এই সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশে।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন। যেন অনেকটা জমিদারের ভাঙা বাড়ির মতো।
রাষ্ট্রপক্ষের এই অবস্থান তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আবারও গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা উচিত।
এর আগে বিএনপি, জামায়াত ও সুজনসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষের আইনজীবীরাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তাদের আইনি যুক্তি তুলে ধরেন।
আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








