News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:১১, ৫ নভেম্বর ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলে ব্যারাকে ফিরে যাবে সেনাবাহিনী

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলে ব্যারাকে ফিরে যাবে সেনাবাহিনী

আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। 

বুধবার (০৫ নভেম্বর) ঢাকা সেনা সদরে আয়োজিত ধারাবাহিক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার ঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে, যা সেনাবাহিনীর ব্যারাকে ফেরার পথও সুগম করবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেনাবাহিনীও চায়, সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী নির্বাচন হোক। নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরলে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যেতে পারবে এবং মূল প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক)-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায়, সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার যে রূপরেখা ঘোষণা করেছে, সেটির ভিত্তিতেই সেনাবাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত পরিসরে হলেও নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনীর করণীয়কে কেন্দ্র করেই এর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান উল্লেখ করেন, গত ১৫ মাস ধরে সেনাবাহিনী মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। প্রয়োজনে নির্বাচন ও পরবর্তী সময়েও এই দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে হতে পারে। 

তিনি বলেন, শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু দীর্ঘদিন মাঠে থাকার কারণে সেনাবাহিনীর মূল প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।

তিনি আরও জানান, যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা গত ১৫ মাস দায়িত্ব পালন করেছি, তা একেবারেই সহজ ছিল না। বাংলাদেশ প্রতিদিন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় না। নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাহিনী পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। তাই সেনাবাহিনী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং সেনানিবাসে ফিরে যেতে আগ্রহী।

আরও পড়ুন: ৪৮ হাজার পুলিশ সদস্যের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মিলিটারি অপারেশনস অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্য সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করছে, ভবিষ্যতেও করবে।

নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা নির্বাচন পেছানোর গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী এবং নির্বাচন কমিশন যে পরিপত্র দেবে তার আলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও জানান, আসন্ন নির্বাচনে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার সেনা সদস্য মাঠে মোতায়েন থাকবে—যা এযাবৎ সর্বোচ্চ। 

তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে জেলা, উপজেলা এমনকি আসন ভিত্তিক ক্যাম্প স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য যা যা প্রয়োজন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা করতে প্রস্তুত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে চলমান অপপ্রচার প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বানোয়াট প্রচারণা চালাচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি—সেনাবাহিনী প্রধান এবং সিনিয়র নেতৃত্বের প্রতি বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সম্পূর্ণ অনুগত। যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সেনাবাহিনী আরও ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল এবং ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ়।

একই সঙ্গে ঢাকামুখী অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেনাবাহিনী জানায়, তারা এ বিষয়ে চিন্তিত। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সেনা ও আইসিটি দুটি বিশেষ আইন—এদের মুখোমুখি করা উচিত নয়। অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের বিচারপ্রক্রিয়া সরকার যেভাবে ভালো মনে করবে, সেভাবেই চলবে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনী দেশের জনগণের সেনাবাহিনী; তাই জনগণের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব সেনাবাহিনী পালন করে যাবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনাবাহিনীর এই ধারাবাহিক বার্তা রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও দেশে আশাবাদ ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশা জাগিয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়