News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ৬ নভেম্বর ২০২৫

ঘূর্ণিঝড় কালমেগিতে ফিলিপাইনে ১৪০ জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় কালমেগিতে ফিলিপাইনে ১৪০ জনের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে চলতি বছরের অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘কালমেগি’র আঘাতে অন্তত ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটির জনবহুল দ্বীপ সেবু, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন চার লাখেরও বেশি মানুষ। 

বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) ফিলিপাইনের জাতীয় নাগরিক প্রতিরক্ষা অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও এএফপি।

জাতীয় প্রতিরক্ষা অফিসের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১১৪ হলেও সেবু প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ২৮ জনের মৃত্যুর তথ্য যুক্ত করলে মোট প্রাণহানি দাঁড়ায় ১৪০ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ৮২ জন, নিখোঁজ রয়েছেন ১২৭ জন।

ঘূর্ণিঝড় কালমেগির প্রভাবে সেবু দ্বীপের প্রায় সব শহর প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে আসা কাদাযুক্ত স্রোতে আবাসিক এলাকা, ছোট ঘরবাড়ি, গাড়ি, ট্রাক এমনকি বিশাল কনটেইনার পর্যন্ত ভেসে গেছে। শহরজুড়ে পুরু কাদার স্তর জমে আছে, উদ্ধারকর্মীরা নৌকা ব্যবহার করে ঘরের ভেতর আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করছেন।

ম্যান্ডাউ শহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জেল-আন মোইরা সার্ভাস বলেন, আমার ঘর কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায়। আমি দ্রুত পরিবার নিয়ে বেরিয়ে আসি, সঙ্গে শুধু কিছু খাবার আর ইলেকট্রনিক জিনিস নিয়েছিলাম। এখন সূর্য উঠেছে, কিন্তু ঘরবাড়ি এখনো কাদায় ভরা, সবকিছু এলোমেলো। কোথা থেকে পরিষ্কার শুরু করব তা-ই জানি না।

১৯ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধারকর্মী কার্লোস হোসে লানাস বলেন, আমরা খারাপের জন্য প্রস্তুত ছিলাম, তবুও বন্যার ব্যাপকতা আমাদের হতবাক করেছে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। সেবুর প্রায় সব নদী উপচে পড়েছিল। এমনকি জরুরি উদ্ধারকর্মীরাও এমন পরিস্থিতি আশা করেননি।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় কালমেগির তাণ্ডবে ফিলিপাইনে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু

মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ছয়জন সেনা সদস্য, যারা মঙ্গলবার ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে সেবুর দক্ষিণে মিন্ডানাও দ্বীপে যাচ্ছিলেন। তাদের হেলিকপ্টারটি আগুসান দেল সুর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। 
ফিলিপাইন বিমানবাহিনী জানায়, হেলিকপ্টারটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয় এবং পরে ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করেন। 

তিনি বলেন, প্রায় ১০ থেকে ১২টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এত বিস্তৃত প্রভাবের কারণে এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ।

তিনি আরও জানান, এই সিদ্ধান্ত শুধু কালমেগির ক্ষয়ক্ষতির জন্য নয়, বরং সপ্তাহান্তে আসন্ন আরেকটি ঝড় ‘উয়ান’-এর আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবেও নেওয়া হয়েছে।

‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার ফলে সরকার জরুরি তহবিল ব্যবহারের ক্ষমতা পায় এবং ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দ্রুত বিতরণে প্রশাসনিক বাধা কমে যায়।

ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। মাত্র এক মাস আগেই সুপার টাইফুন রাগাসা ও টাইফুন বুয়ালোইয়ের আঘাতে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সেবুতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বর্তমানে কালমেগি ফিলিপাইন ছেড়ে মধ্য ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ইতিমধ্যেই রেকর্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভিয়েতনামে প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছিলেন। শুক্রবার সকালে কালমেগির সেখানে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল বা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডও ঝড়ের প্রভাবে সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, এএফপি

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়