News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০১, ৬ নভেম্বর ২০২৫

আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিলো হামাস

আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দিলো হামাস

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে আরও এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। 

বুধবার (০৫ নভেম্বর) গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলের শুজাইয়া এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড। 

বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে—তিনি ছিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-এর একজন সার্জেন্ট। এ নিয়ে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে হামাস ২০ জন জীবিত বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ২৮ জনের মধ্যে ২২ জনের মরদেহ ফেরত দিয়েছে, যাদের অধিকাংশই ইসরায়েলি নাগরিক।

তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, এর আগে ফেরত পাওয়া একটি মরদেহ তাদের নিখোঁজ বন্দিদের কারও সঙ্গে মেলেনি। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে তখনই, যখন সকল বন্দির মরদেহ ফেরত পাওয়া যাবে।

হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে মরদেহ শনাক্ত ও উদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক নুর ওদেহ জানিয়েছেন, শুজাইয়া এলাকায় চার দিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। 

তিনি জানান, ওই এলাকা বিগত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং মরদেহ উদ্ধারে একটি মিশরীয় বিশেষজ্ঞ দলও অংশ নিয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলা ও ত্রাণ সংকট অব্যাহত

হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ভারী যন্ত্রপাতি ও বুলডোজার প্রবেশে বাধা দেওয়ায় অনুসন্ধান অভিযান আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। গাজার কর্তৃপক্ষ একাধিকবার অভিযোগ করেছে যে যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনির মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই বিকৃত ও নির্যাতনের চিহ্নযুক্ত।

চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে নির্ধারিত হয়েছে, জীবিত ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে ইসরায়েল। পাশাপাশি, প্রত্যেক বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর অবস্থায়ও গাজার বিভিন্ন অংশে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার অভিযোগ উঠেছে। মধ্য গাজায় দুই ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের দাবি, ওই দুই ব্যক্তি যুদ্ধবিরতির হলুদ রেখা অতিক্রম করে ইসরায়েলি অবস্থানের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।

এদিকে, যুদ্ধবিরতি চললেও গাজা উপত্যকা জুড়ে আশ্রয়, খাদ্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। আসন্ন শীতকালকে সামনে রেখে ফিলিস্তিনিদের প্রস্তুতিও পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংস্থাগুলো।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৮৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি প্রধান বিষয় ছিল বন্দিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হামাস সব মরদেহ হস্তান্তর না করে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তবে হামাসের দাবি, চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূরণে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও বাস্তব পরিস্থিতি অনুসন্ধান ও হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও সর্বশেষ মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এখনো ছয়জন বন্দির মরদেহ গাজায় রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।

এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ, মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ এবং বন্দি বিনিময়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মরদেহ উদ্ধারের অগ্রগতির ওপর। দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের মধ্যেও যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা ও মানবিক সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন গাজার দিকে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়