মামদানির জয়ে সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছেন জোহরান মামদানি। ৩৪ বছর বয়সী দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই মুসলিম রাজনীতিক ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়াকে পরাজিত করেছেন।
মামদানি ইতিহাস গড়ার এই বিজয়ের পর জানিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি ও বাজারদরের বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আগ্রহী।
মজার ছলে তিনি বলেন, হোয়াইট হাউস থেকে এখনও আমাকে অভিনন্দন জানানো হয়নি।
তিনি আরও যোগ করেন, কীভাবে আমরা একসঙ্গে নিউইয়র্কবাসীর সেবা করতে পারি সে বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।
মামদানির জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিয়ামিতে এক বক্তৃতায় বলেন, নিউইয়র্কের এই ভোট ফলাফল দেশের সার্বভৌমত্বে আংশিক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেন, গতরাতে আমরা নিউইয়র্কে কিছুটা সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি।
ট্রাম্প স্পষ্ট করেননি কীভাবে দেশটির সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরটি ‘কমিউনিস্ট শহরে’ পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকানদের সামনে এখন খুবই স্পষ্ট একটি সিদ্ধান্ত—আমরা কমিউনিজম বেছে নেব নাকি সাধারণ জ্ঞান ও যুক্তির পথে চলব? আমাদের সামনে অর্থনৈতিক দুঃস্বপ্ন ও অর্থনৈতিক অলৌকিকতার মধ্যে পছন্দ রয়েছে।
ট্রাম্প মায়ামিতে বলেন, ফ্লোরিডা শিগগিরই সেইসব মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে, যারা নিউইয়র্কের কমিউনিজম থেকে পালিয়ে আসবেন।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক অন্ধকারে নিউইয়র্ক হবে আলোর দিশা: মামদানি
তিনি বলেন, “আমরা চাই নিউইয়র্ক সফল হোক” এবং ইঙ্গিত দেন যে মামদানিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে সামান্য সহায়তা দেওয়া হতে পারে।
এর পাশাপাশি, ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে নিজের নির্বাচনী জয়ের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বক্তৃতা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের অর্থনীতি উদ্ধার করেছি, স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি এবং এক বছর আগে সেই মহিমান্বিত রাতে একসাথে দেশকে রক্ষা করেছি।
মামদানি ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জানান, তিনি জীবনযাত্রার ব্যয়, করপোরেশন ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা এবং সাধারণ নাগরিকদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের জন্য শেখার বিষয় হলো—শুধু শ্রমজীবী মানুষের সংকট চিহ্নিত করলেই হবে না, সেই সংকট মোকাবিলায় বাস্তব পদক্ষেপও নিতে হবে।
বিজয়োৎসবে তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে সংক্ষেপে বলেন, চারটি শব্দ—‘টেলিভিশনের ভলিউম বাড়ান!’
মামদানি নির্বাচনী প্রচারে করপোরেশন ও ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের জন্য জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার পরিকল্পনায় রয়েছে ভাড়া স্থগিত রাখা, বিনামূল্যে শিশুসেবা ও ফ্রি বাস পরিষেবা চালু করা।
তিনি ইতিহাসের প্রথম মুসলিম হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যিনি চার বছর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগ করেন। কুয়োমো নির্বাচনী প্রচারে মামদানিকে ‘বিপজ্জনক উগ্র বামপন্থি’ আখ্যা দিয়েছিলেন এবং তার প্রস্তাবগুলোকে ‘অবাস্তব ও ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছিলেন।
মামদানির জয়, পাশাপাশি ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সাফল্য, ইঙ্গিত দেয় যে আগামী বছরের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আবহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভবনা রয়েছে।
ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতারা মামদানির মুসলিম পরিচয়, দক্ষিণ এশীয় বংশ এবং ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট নীতির কারণে তার নির্বাচনী জয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে মামদানি নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সেবা উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিউইয়র্কের এই ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ শহরগুলোতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিচ্ছে এবং ফেডারেল নীতি নির্ধারণে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স, টিআরটি ওয়ার্ল্ড
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








