News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৬ নভেম্বর ২০২৫
আপডেট: ১২:৫১, ৬ নভেম্বর ২০২৫

টেলিযোগাযোগ খসড়ায় অশ্লীল বার্তা ও বিরক্তিকর ফোনে কঠোর সাজা

টেলিযোগাযোগ খসড়ায় অশ্লীল বার্তা ও বিরক্তিকর ফোনে কঠোর সাজা

ছবি: সংগৃহীত

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে, যেখানে টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অংশীজন ও সাধারণ নাগরিকদের মতামতের জন্য খসড়াটি বিভাগের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে এবং ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত জানানো যাবে।

খসড়া অধ্যাদেশে রাখা প্রধান বিধান ও শাস্তিসমূহ হলো:

  • অশ্লীল ও অশোভন বার্তা প্রেরণ

অধ্যাদেশের ধারা ৬৯ অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ যন্ত্র বা বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে অশ্লীল, ভীতিকর, অপমানজনক বা অশোভন বার্তা, ছবি বা ভিডিও প্রেরণ করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।

ধারা ৬৯(ক)-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রেরণের উদ্দেশ্যে যন্ত্র পরিচালনাকারীর নিকট প্রস্তাব দেয় বা চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে অশ্লীল, গুরুতরভাবে অপমানজনক, হুমকিমূলক বা ভীতিকর বার্তা প্রেরণ করে, তাহলে প্রস্তাবকারী ও প্রেরণকারী উভয়ই অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। গুরুতর ক্ষেত্রে ধারা ৬৯(গ)-এ প্রেরণকারী সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে এবং অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাইবার সুরক্ষা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে।

  • ফোনে বিরক্ত করা

ধারা ৭০ অনুযায়ী, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কাউকে বারবার ফোন করে বিরক্ত করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য দোষী ব্যক্তি এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

  • বেআইনিভাবে আড়ি পাতার শাস্তি

বেআইনিভাবে আড়ি পাতা বা টেলিযোগাযোগ ব্যবহারে অন্যের ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘন করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা দেড় কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

আরও পড়ুন: ‘গ্রাহকদের জন্য মানসম্পন্ন সংযোগ ও তরঙ্গের সুষম বণ্টন জরুরি’

  • ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য

অধ্যাদেশের ধারা ৬৬ক অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্র ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী যদি ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করে, যা সহিংসতা সৃষ্টি করে, বিশৃঙ্খলা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্দেশ করে, বা দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষুণ্ন করে, তাহলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৯৯ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
উক্ত অপরাধের বিপরীতে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী যদি কমিশনের নির্দেশ পালন না করে, তাহলে সে প্রতিষ্ঠানও অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৯৯ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

খসড়া অনুযায়ী, ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা যেমন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন মেসেজিং ও ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ সবই সরকারের অনুমোদনের আওতায় আসবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে নিবন্ধন নিতে হবে এবং প্রয়োজনে নিরাপত্তা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

এই খাতে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কমিশন’ গঠন করা হবে। পাঁচ সদস্যের এই কমিশনের একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন। কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে লাইসেন্স প্রদান, নীতিনির্ধারণ, স্পেকট্রাম বণ্টন ও প্রযুক্তিগত মান নিয়ন্ত্রণ।

অনুমতিহীনভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা বা বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার প্রয়োজনে যেকোনো প্ল্যাটফর্ম স্থগিত বা বন্ধ করতে পারবে।

অধ্যাদেশের বিষয়ে মতামত পাঠানো যাবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ই-মেইলে secretary@ptd.gov.bd অথবা ডাকযোগে সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা ঠিকানায়।

এই খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে নিয়ন্ত্রণ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে। অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত অপরাধ, অনিয়ন্ত্রিত বার্তা প্রচার, ডিজিটাল হামলা ও অশ্লীলতা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়