১ ট্রিলিয়ন ডলারে এআই পাওয়ারহাউস হবে সৌদি আরব
ছবি: সংগৃহীত
তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু করেছে সৌদি আরব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্ব অর্জনের লক্ষ্যে দেশটি নিয়েছে এক বিশাল উদ্যোগ—প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেট নিয়ে গড়ে তুলছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্ক। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান ‘হিউমেইন’।
‘হিউমেইন’-এর মাধ্যমে সৌদি আরব গড়ে তুলছে একটি পূর্ণাঙ্গ এআই ইকোসিস্টেম, যার মধ্যে রয়েছে ডেটা সেন্টার, ক্লাউড অবকাঠামো, লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এবং বিভিন্ন এআই অ্যাপ্লিকেশন। গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের আগে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। চলতি সপ্তাহে রিয়াদে অনুষ্ঠিত ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এফআইআই) সম্মেলনে হিউমেইনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আর্থিক সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত পরিসর আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়।
হিউমেইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারেক আমিন জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এআই বাজারে পরিণত করা। শিল্পে নবাগত হয়েও তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হলো এর প্রচুর ও স্বল্পমূল্যের জ্বালানি সম্পদ, যা আধুনিক কম্পিউটিং শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
সিএনএন–এর বেকি অ্যান্ডারসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমিন বলেন, সৌদি আরবে আমাদের বড় সুবিধা হলো এর শক্তিশালী বিদ্যুৎ অবকাঠামো। হিউমেইনকে আলাদা করে সাবস্টেশন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে না। এর মানে, ‘১৮ মাসে বছর’ হওয়ার সমস্যায় পড়তে হবে না।
২০২৩ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ছয় গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে হিউমেইন। এই প্রকল্পে তাদের অংশীদার হিসেবে রয়েছে এনভিডিয়া, এএমডি, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, কোয়ালকম ও সিসকোর মতো বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল শাটডাউনের শঙ্কা আইএসপি ব্যবসায়ীদের
গত মঙ্গলবার হিউমেইন ঘোষণা দিয়েছে, তারা সৌদি আরবে নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণের জন্য প্রাইভেট ইকুইটি জায়ান্ট ব্ল্যাকস্টোন-এর সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। একই দিনে তারা উন্মোচন করেছে একটি এআইচালিত অপারেটিং সিস্টেম—‘হিউমেইন ওয়ান’। এই অপারেটিং সিস্টেমে প্রচলিত উইন্ডোজ বা আইওএসের মতো মাউস ক্লিক বা আইকন ব্যবহারের বদলে ব্যবহারকারীরা ভয়েস বা টেক্সট কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারবেন।
এরই মধ্যে হিউমেইন মানবসম্পদ, অর্থ, আইন, পরিচালন ও আইটি বিভাগে ব্যাপকভাবে এই এআই সিস্টেমটি ব্যবহার করছে।
সিইও তারেক আমিন জানান, আমার পে–রোল বিভাগে এখন একজন মানুষ আছে, বাকিদের জায়গায় কাজ করছে এআই এজেন্টরা।
‘ভিশন ২০৩০’ অর্থনৈতিক রূপান্তর পরিকল্পনার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে সৌদি আরব। তবে দেশটি বর্তমানে তেলের দামের পতন এবং নিওম–এর মতো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের বিলম্বের কারণে নতুন চাপে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এআই-কেন্দ্রিক উদ্যোগকে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে সৌদি আরবকে প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে কাছের প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সঙ্গে। দেশটির এআই প্রতিষ্ঠান ‘জি ৪২’ সম্প্রতি ‘স্টারগেট ইউএই’ নামে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল ডেটা সেন্টার প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সবচেয়ে বড় ডেটা সেন্টার হিসেবে বিবেচিত হবে। এই প্রকল্পে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত রয়েছে ওপেনএআই, ওরাকল, এনভিডিয়া ও সিসকো।
এ প্রসঙ্গে তারেক আমিন বলেন, মানুষের জন্য ভালো যে জ্ঞান তা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত না হয়ে ছড়িয়ে থাকাই উচিত। তাই ইউএইতে যা হচ্ছে, তা ভালো। সৌদি আরবে যা হচ্ছে, তাও খুব ভালো।
তিনি আরও বলেন, আমরা যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন... হিউমেইন একটি হোল্ডিং কোম্পানি নয়। আমরা একটি অপারেটিং কোম্পানি।
সূত্র: সিএনএন
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








