জাহানারার অভিযোগে বিসিবির তিন সদস্যের কমিটি
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক নির্বাচক ও টিম ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে জাতীয় নারী দলের পেসার জাহানারা আলমের আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিসিবি জানিয়েছিল, অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে এবং ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেবে। দুদিন পর শনিবার (০৮ নভেম্বর) রাতে বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির নাম ঘোষণা করে।
তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তারিক উল হাকিমকে। অন্য দুই সদস্য হলেন বিসিবির একমাত্র নারী পরিচালক রুবাবা দৌলা এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা। ব্যারিস্টার সারওয়াত বাংলাদেশ উইমেন্স স্পোর্টস ফেডারেশনের সভানেত্রীও।
বিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারী দলের ভেতরে ঘটে যাওয়া কথিত অসদাচরণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি বিস্তারিত তদন্ত করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্ত শেষে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বোর্ড পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত জাহানারা আলম সম্প্রতি একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, মঞ্জুরুল ইসলাম তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে যৌন হয়রানি করেছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, হ্যান্ডশেকের বদলে জড়িয়ে ধরা, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অশোভন প্রশ্ন করা—এসব আচরণের শিকার হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জাহানারার অভিযোগে তদন্তের দাবি মাশরাফির
জাহানারা বলেন, ২০২১ সাল থেকে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এসব ঘটনা ঘটেছে। তিনি বারবার বিসিবির শীর্ষ পর্যায়ে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। তার অভিযোগে আরও কয়েকজনের নামও উঠে এসেছে, যারা তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
অভিযোগের পর নীরবতা ভেঙে মঞ্জুরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, জাহানারার সব অভিযোগই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। তিনি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত এবং দেশে ফিরে যেকোনো সময় বসতে রাজি আছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে সেখানেও নিজের বক্তব্য দিতে চান জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার।
আইসিসির সভায় যোগ দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তার সিদ্ধান্তের পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জাহানারার অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, জাহানারা আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে ১৩৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন জাহানারা আলম। তিনি নারী ক্রিকেটের প্রথম সারির সেনানিদের একজন এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। সেখানে ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি লেভেল-২ কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
অন্যদিকে, মঞ্জুরুল ইসলামকে ২০২০ সালের অক্টোবরে নারী ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক করা হয়। পরে তিনি টিম ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া বাংলা টাইগার্সের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি চীনে অবস্থান করছেন এবং চায়না জাতীয় নারী দলের কোচ হিসেবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে এই অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি গঠন নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিসিবি জানিয়েছে, তদন্ত শেষে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখন নজর থাকবে তদন্ত কমিটির কাজ ও প্রতিবেদনের ওপর।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








