News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

আজ জানা যাবে শেখ হাসিনার রায় কবে হবে

আজ জানা যাবে শেখ হাসিনার রায় কবে হবে

ফাইল ছবি

জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ধার্য করা হবে আজ।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল দিনটি নির্ধারণ করবেন। 
প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকে মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের সর্বোচ্চ দণ্ড দাবি করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাদের খালাস প্রার্থনা করেন।

২৩ অক্টোবরের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিশ্ব ইতিহাসে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ও হেভিওয়েট নেতাদের বিচারের নজির তুলে ধরেন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন তিনি।

এরপর আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিতর্কের কিছু বিষয়ে জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে পুনরায় যুক্তি উপস্থাপন করেন স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল আমির হোসেন। এইসব শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আজকের তারিখ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, আজ রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হলে এক সপ্তাহের মধ্যেই মানবতাবিরোধী অপরাধের এই ঐতিহাসিক মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হবে জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যা ও দমন-নিপীড়ন সংক্রান্ত প্রথম রায়, যা জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আশরাফুলের জবানবন্দি: এসি-ওসির নির্দেশে গুলিতে নিহত আবু সাঈদ

এ মামলায় তিনজন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে—
১. উসকানি ও পরিকল্পিত সহিংসতা,
২. মারণাস্ত্র ব্যবহার,
৩. আবু সাঈদ হত্যা,
৪. চানখারপুল হত্যাকাণ্ড,
৫. আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো।

প্রসিকিউশনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগনামা প্রায় ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্রের অংশ ২,০১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪,০০৫ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২,৭২৪ পৃষ্ঠা।

মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট, প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণ ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন ট্রাইব্যুনালে। সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ হয় ৮ অক্টোবর, মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা শেষে।

সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। ফলে তার বিষয়ে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার খালাস প্রার্থনা করেছেন। আইনজীবী মহলে ধারণা, আজ রায়ের দিন ধার্য হলে তার অবস্থান নিয়েও একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত।

অন্যদিকে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ রায় ঘিরে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। 

নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে একাধিক স্থানে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ও বিশৃঙ্খল কার্যক্রমের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে প্রসিকিউশন বলছে, এসব ঘটনায় তারা কোনো অনিরাপত্তা বোধ করছে না। প্রসিকিউটরদের ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছে এবং ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়