বিশ্বকাপের মুকুট অস্ট্রেলিয়ার
ঢাকা: এই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে বড় স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, সেই তারই হাতে স্বপ্নের সমাধি। মেলবোর্নের রবিবারসীয় ফাইনালে ইনিংসের পঞ্চম বলে কিউই অধিনায়ক যখন মিশেল স্টার্কের শিকারে পরিণত হলেন ঠিক তখনই যেন ম্যাচের গতিপথ নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল! প্রশস্ত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ের পথ। মাইকেল ক্লার্ক ও স্টিভ স্মিথদের প্রত্যয়ী ব্যাটিংয়ে কয়েক ঘণ্টা বাদে সেটাই ধ্রুবসত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
যদিও দুই তাসমানিয়ান প্রতিবেশীর লড়াইয়ে বিশ্ব আবেগ নিউজিল্যান্ডের পাশেই ছিল। মেলবোর্নের ৯২ হাজার দর্শকের অধিকাংশও কিউইদের জন্য গলা ফাটাচ্ছিল। কিন্তু ‘প্রার্থনা’ বনাম ‘দক্ষতা’র ম্যাচে কোটি মানুষের চাওয়া পূরণ হয়নি। ‘ক্রিকেটের স্পেন’ হতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ফিরিয়ে আনতে পারেনি ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট রূপকথাও। ফলে হলুদ ঝড়ে উড়ে যেতে হয়েছে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম বাহিনীকে। রোববার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে নিউজিল্যান্ড।
এমসিজিতে মাত্র ১৮৩ রানে অলআউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৯৮৩। সেবার লর্ডসে প্রথমে ব্যাট করে কিউইদের সমান ১৮৩ রানেই অলআউট হয়েছিল ভারত। কিন্তু মামুলি এই সংগ্রহটাই মাড়াতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের সারথীরা। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার ও গর্ডন গ্রিনিজের সমন্বয়ে গড়া দলটি অলআউট হয়েছিল ১৪০ রানে। ৪৩ রানে ম্যাচ জিতেছিল ভারত। জিতেছিল প্রথম বিশ্ব শিরোপাও। কিন্তু কপিল দেব ও মদন লালদের মতো জ্বলে উঠতে পারেননি ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদিরা। পারেনি তাদের দলও।
নিউজিল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ১৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও ছিল নড়বড়ে। ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্যক্তিগত রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন অ্যারন ফিঞ্চ। যা ১৯৮৩ সালে বলিন্দর সিধুর কীর্তিকে স্মরণ করাচ্ছিল। ডেভিড ওয়ার্নার (৪৫) ইনিংসের ১৩তম ওভারে আউট হলে মলিন হতে থাকা মহিন্দর অমরনাথ ও কীর্তি আজাদের স্মৃতিটা আবারো জীবন্ত হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা মাইকেল ক্লার্ক যেন ভিন্ন প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন। তৃতীয় উইকেটে স্টিভ স্মিথকে নিয়ে ১১২ রানের জুটি গড়েন অসি অধিনায়ক। ৭২ বলে ৭৪ রান করে হেনরির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ক্লার্ক। শেন ওয়াটসনকে নিয়ে জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতাটুকু সারেন ভারত-বধের নায়ক স্টিভ স্মিথ। ইনিংসের ৩৩.১ ওভারেই। সেমিতে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ফাইনালেও অর্ধশতক তুলে নেন অসিদের নাম্বার থ্রি। ৬৫ রান করে অপরাজিত থাকেন স্মিথ। ২ রানে শেন ওয়াটসন।
এর আগে রোববার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড ইনিংসের পাঁচ ওভার বাকি থাকতেই ৪৫ ওভারে ১৮৩ রানে অলআউট হয়। কিউইদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৩ রান এসেছে গ্রান্ট এলিয়টের ব্যাট থেকে। এমসিজিতে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার সন্ধানে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে (০) হারায় নিউজিল্যান্ড। মিশেল স্টার্কের বলে বোল্ড আউট হন বি-ম্যাক। দলীয় ৩৩ রানে ফেরেন মার্টিন গাপটিল (১৫)। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ছয়টি রান যোগ হতেই বিদায় নেন কেন উইলিয়ামসনও (১২)।
চতুর্থ উইকেটে রস টেলর ও গ্রান্ট এলিয়টের জুটিতে এই ধাক্কা অনেকটা সামলে ওঠে নিউজিল্যান্ড। এই দুজন ১১১ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। কিন্তু জেমস ফকনারের করা ৩৬ ওভারের প্রথম বলে রস টেলর (৪০) আউট হতেই ভেঙে পড়ে কিউইরা। ওই ওভারেই আউট হন কোরি অ্যান্ডারসন (০)। স্কোরবোর্ডে আর এক রান যোগ হতেই শূন্য রানেই ফেরেন লুক রঞ্চিও (০)। ৩৬.২ ওভারে ছয় উইকেট হারানোর পর আর খেলায় ফিরতে পারেননি কিউইরা। ডেনিয়েল ভেট্টোরি (৯), টিম সাউদি (১১) ও ম্যাট হেনরি (০) দ্রুতই আউট হন। তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন মিশেল জনসন ও জেমস ফকনার। দুটি উইকেট গেছে মিশেল স্টার্কের দখলে। একটি উইকেট পান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালের পর পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার কৃতিত্ব দেখালো অস্ট্রেলিয়া। আর মাইকেল ক্লার্ক বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলার সুযোগ পেল।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফকে
নিউজবাংলাদেশ.কম








