মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করছে জামায়াত: রিজভী

জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, দলটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে এবং ইসলামিক ধর্মের নামে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। 

তিনি বলেন, জামায়াত ভোটারদের কাছে জান্নাতের টিকিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করছে, যা মধ্যযুগীয় পাদ্রিদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনীয়।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রিজভী এসব মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, জামায়াত বলছে, ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে। এটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। বাড়িতে বাড়িতে তাদের কর্মীরা গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে যে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে বেহেস্তের রাস্তা সুগম হবে। 

তিনি এটিকে মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান পাদ্রিদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, জান্নাতের টিকিট বিক্রি করে তারা বাংলাদেশে কি আবার অন্ধকার যুগ ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে?

তিনি আরও অভিযোগ করেন, জামায়াত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার জন্য একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করেছে। 

আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ভুলে ফ্যাসিস্টদের কবলে পড়া যাবে না: মির্জা ফখরুল

রিজভী বলেন, তারা কিছু ছেলেপেলেকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার, কটুক্তি ও করুচিপূর্ণ কথা ছড়ানোর বাহিনী গড়েছে। এরা মিথ্যাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রচার করছে প্রতিনিয়ত।

রিজভী বিএনপির নেতা হিসেবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা রক্ষায় সতর্ক করে বলেন, জামায়াত নিজেদের ক্ষোভের জোরে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। দলটি পিআর, সংস্কার, গণভোট—এমন নানামুখী বিতর্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্র করছে। সাধারণ মানুষ পিআর সম্পর্কে জানে না।

তিনি বলেন, যারা নভেম্বর মাসে গণভোটের কথা বলছেন, তাদের একটি মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। তারা শর্ত আরোপের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায়।

রিজভী জামায়াতকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘লেজ ধরে চলার’ অভ্যাসের জন্যও অভিযোগ করেন। 

তিনি বলেন, তাদের রাজনৈতিক চাতুর্য দেখলেই বোঝা যায়, তারা কৌশলে আওয়ামী লীগের ভোট টানার পাঁয়তারা করছে। একদিকে পিআর, সংস্কার, গণভোট—এগুলো দিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে, অপরদিকে ধর্মীয় আবেগে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশে নতুন কোনও ইসলামিক ধারার নাম করে বিভ্রান্তিকর মতাদর্শ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। এটিকে ‘মওদুদীবাদ’ বলা যায়। দেশের মানুষ এটা কোনোদিনই গ্রহণ করবে না। আমাদের ঈমান, আকিদা ও তাওহিদে বিশ্বাসের জায়গায় এই ধরনের মতাদর্শের কোনো স্থান নেই।

তিনি ইতিহাসের উদাহরণ তুলে বলেন, ৭১ সালের যারা ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারাও মুসলমান ছিল। কিন্তু একজন মুসলমান কি অন্য একজন মুসলমানের ওপর অত্যাচার করতে পারে? একজন মুসলমান কি অন্য মুসলমানের মেয়েকে শ্লীলতাহানি করতে পারে? এবং যারা এসব অপরাধের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তারা কি ভালো মানুষ? নিজেদের অতীত ভুলে গিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং ক্ষমতার জন্য যেকোনও পথ নেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না।

রিজভী ইসলামের মৌলিক নীতিমালা রক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ইসলামের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ইসলাম মুনাফেককে একেবারেই টলারেট করে না। মুনাফেক ইসলামের নাম নিয়ে ইসলামের ক্ষতি করবে।