দেশ রক্ষায় ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
ফাইল ছবি
দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে ঐক্য ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (০১ নভেম্বর) এক বার্তায় তিনি বলেন, আমাদের সামনে মহা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, সংগঠন বা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া বিকল্প নেই।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হওয়ায় কমিশনের সদস্যদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
একই দিনে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনা দেন।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য রাষ্ট্র সংস্কারের পথে আমরা গড়ে তুলেছি, সেটি আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে মহা চ্যালেঞ্জ। এটি একক কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন দিয়ে মোকাবিলা সম্ভব নয়। এজন্য সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় গতকাল, ৩১ অক্টোবর। এই কমিশন চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। স্থায়ী ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে কমিশনটি কাজ শুরু করে।
টানা আলোচনার মাধ্যমে কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ নামে একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করে। সাফল্যের সঙ্গে এই কাজ সম্পন্ন করায় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: ‘সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সমবায়ের বিকল্প নেই’
তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এটি শুধু আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথকে সুগম করবে না, বরং ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে আশার কথা হলো, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি—বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি। অতীতে বিদেশিরা রাজনৈতিক সংলাপে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিলেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, ফলে এবার আমরা বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের ঐক্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন ঐকমত্যের নজির বিরল। ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশও সংকটকালে রাষ্ট্রগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।
সব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন—তাদের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি গণমাধ্যমের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান, যারা মাসের পর মাস কমিশনের কার্যক্রম জনগণের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন।
এদিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা তিন বাহিনীর প্রধানকে নির্দেশ দেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৯০ হাজার সেনা সদস্য, আড়াই হাজারের বেশি নৌবাহিনী সদস্য এবং দেড় হাজার বিমানবাহিনী সদস্য মোতায়েন থাকবেন। প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি সেনা মোতায়েন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ১৫ মাসে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পরিশ্রম করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
এসময় তিন বাহিনীর প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন যে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। বৈঠকে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানান তাঁরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জনগণ এখন প্রত্যাশায় আছে এমন পরিবর্তনের, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে, নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে এবং দেশে আর কখনো স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবে না। এই পরিবর্তনই আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন আনবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে।
শেষে তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানান, রাষ্ট্র সংস্কারের পথে আমরা যে অভূতপূর্ব ঐক্য অর্জন করেছি, সেটি অক্ষুণ্ন রাখুন। এই ঐক্যই আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নতুন ভিত্তি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








