News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ১২ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের নির্দেশ

নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের নির্দেশ

ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)দের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

রবিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আজকের সভায় মূলত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

তিনি জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের শান্তি ও সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য যে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্নকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। একইসঙ্গে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন কোনো আইন বহির্ভূত কাজ না করেন, সে বিষয়েও নির্দেশনা প্রদান করার আলোচনা হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের এবারের নির্বাচনে যথাসম্ভব দায়িত্ব না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে টহল কার্যক্রম ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: অতীশ দীপঙ্করের দর্শনে শান্তি ও মানবতার বার্তা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ২৮টি ব্যাচে তিন দিন মেয়াদি এই প্রশিক্ষণ সারা দেশের ১৩০টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে একটি ব্যাচের (৬,৫০০ জন) প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় ব্যাচের (৬,৫০০ জন) প্রশিক্ষণ চলমান। চূড়ান্ত (চতুর্থ পর্যায়ের) প্রশিক্ষণ ৫ অক্টোবর শুরু হয়েছে এবং আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০২৬-এ সব ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের জন্য ‘প্রাক-নির্বাচনী প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচির আওতায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১৩ জন করে মোট প্রায় ৫ লাখ ৮৫ হাজার সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার অস্ত্রসহ এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার নিরস্ত্র সদস্য প্রশিক্ষণ পাবেন। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এ প্রশিক্ষণ শেষ হবে। নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন, এজন্য ৩,১৫৭ জন রিক্রুট সিপাহিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচনে ১,১০০ প্লাটুনে মোট ৩৩ হাজার বিজিবি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ সদস্যের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং তা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যও নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি জানান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণকে কেন্দ্র করে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া নির্বাচনী প্রস্তুতির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফ্যাসিস্টের লোকজন শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারে, সেজন্য ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল। কিছু ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবীও তাতে ইন্ধন জুগিয়েছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় তৎপরতায় সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সবার সহযোগিতায় এ বছর শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু বাহকদের নয়, মাদকের গডফাদারদেরও আটক করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়