News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১০ অক্টোবর ২০২৫
আপডেট: ২১:৩৫, ১০ অক্টোবর ২০২৫

অতীশ দীপঙ্করের দর্শনে শান্তি ও মানবতার বার্তা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অতীশ দীপঙ্করের দর্শনে শান্তি ও মানবতার বার্তা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী বৌদ্ধ মনীষী অতীশ দীপঙ্করের জ্ঞান, দর্শন, ধর্মচর্চা, কর্ম ও শিক্ষাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দিতে তার জন্মভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা জেলার আশুলিয়ার বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্র (বৌদ্ধ বিহার) আয়োজিত ‘কঠিন চীবর দান উৎসব’-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে মনীষী অতীশ দীপঙ্করের কীর্তি ও বিশ্বব্যাপী খ্যাতিতে আমরা গর্বিত। তার জ্ঞান, দর্শন, ধর্মচর্চা, কর্ম ও শিক্ষা আমাদের সারাদেশে আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য তার নামে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন চর্চা এবং প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে পূর্ব এশিয়া তথা বিশ্বজুড়ে স্মরণীয় নাম অতীশ দীপঙ্কর। তিব্বতীরা তাকে ‘অতীশ’ উপাধিতে ভূষিত করেন, যার অর্থ শান্তি। তিনি ছিলেন ধর্মগুরু, শিক্ষক, পণ্ডিত, লেখক, দার্শনিক, বিতার্কিক ও বাগ্মী।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে মানবজাতিকে আবদ্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। বুদ্ধের মতে মানুষ মৈত্রীপরায়ণ, ক্ষমাশীল ও নির্মোহ হবে; মানুষ মানুষকে শ্রদ্ধা করবে, একে অপরকে সম্মান করবে।

তিনি আরও বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল হলো বুদ্ধ কর্তৃক নির্দেশিত পাঁচটি মৌলিক নীতি—যা মানবতাবাদী ও সার্বজনীন। এই নীতিগুলোর চর্চার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে অন্যায়, অবিচার, অনাচার, অপরাধ ও দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব।

আরও পড়ুন: “দুষ্কৃতকারীদের চেষ্টা ব্যর্থ করে শান্তিপূর্ণ হচ্ছে দুর্গাপূজা”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বদা বদ্ধপরিকর। দেশের সকল বৌদ্ধ বিহারে আশ্বিনী পূর্ণিমার পর হতে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি দুর্গাপূজায় অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল—এ ধরনের সাম্প্রদায়িকতা নষ্টকারী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে কেউ তা নস্যাৎ করতে না পারে।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সব ধর্মই শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা প্রচার করে আসছে। আমাদের দেশে কোনো ধর্মীয় বিভেদ নেই; সবাই শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানে থেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। কিন্তু এক শ্রেণির ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবী বিষয়টিকে সবসময় ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আরও বলেন, কঠিন চীবর দান উৎসব এমন এক আধ্যাত্মিক আয়োজন, যা সমাজে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা জাগিয়ে তোলে। এই উৎসবের মাধ্যমে বিশ্বমানবতার জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা সঞ্চারিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ধর্মপাল বীরাক্কোদি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যবসায়ী শুভাশীষ চাকমা এবং কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম প্রমুখ।

অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুনরায় বলেন, অতীশ দীপঙ্কর শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো বিশ্বের সম্পদ। তার আদর্শ, দর্শন ও শিক্ষা মানবজাতির শান্তি ও সম্প্রীতির পথপ্রদর্শক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুষ্ঠানের তথ্য জানানো হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়