News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:১৩, ২৭ আগস্ট ২০২৫

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে ৩ উপদেষ্টা

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে ৩ উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

দেশের প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিনে দিনে উত্তপ্ত আকার ধারণ করছে। শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে পাঁচ দফা দাবি তুলেছেন, অন্যদিকে সরকার চেষ্টা করছে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে। 

এই অচলাবস্থা নিরসনে বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার পর রাজধানীর রেলভবনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সরকারের তিন উপদেষ্টা।

এদিন দুপুরে সরকার প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের পেশাগত বিরোধ মীমাংসা এবং দাবির যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য একটি আট সদস্যের কমিটি গঠন করে। 

এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সেতু বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আবাসন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান IEB ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংগঠন IDEB-এর প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি বোর্ডের সদস্য তানভীর মঞ্জুর এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী মোহাম্মদ মুজাম্মেল হককে।

তবে এই কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তীব্র আপত্তি তোলে। 

তাদের অভিযোগ, এই কমিটিতে প্রকৃত স্টেকহোল্ডার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে কমিটির কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

কমিটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উল্টো পাঁচ দফা নতুন দাবি উপস্থাপন করে।

প্রথমত, তারা বলেন—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে প্রকাশ্যে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে এবং দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিসহ প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের পক্ষের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি অবিলম্বে সংস্কার করতে হবে।

তৃতীয়ত, সংশোধিত কমিটির মাধ্যমে আগের তিন দফা মূল দাবিকে দ্রুততম সময়ে গ্রহণ করে নির্বাহী আদেশে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তিন উপদেষ্টা—ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে একই দিন নিশ্চয়তা দিতে হবে।

আরও পড়ুন: বিএসসি–ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দ্বন্দ্বে সরকারের ৮ সদস্যের কমিটি

চতুর্থত, আন্দোলনের সময় আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে পুলিশের মাধ্যমে আর কোনো হামলা না হয়।

পঞ্চমত, শিক্ষার্থী রোকনের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং এ ঘটনায় অভিযুক্ত ডিসি মাসুদকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে।

রেলভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১১ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অংশ নেন। সরকারের পক্ষ থেকে তিন উপদেষ্টা—মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান এবং সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক শুরু হলেও বাইরে শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত শত শত শিক্ষার্থী তাদের স্লোগানে স্পষ্ট বার্তা দেন, যে কোনো সিদ্ধান্তের আগে তারা মাঠ ছেড়ে যাবেন না।

শিক্ষার্থীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। তারা চান, যোগ্যতা ও স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রকৌশলীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত হোক। একই সঙ্গে “প্রকৌশলী” উপাধি ব্যবহার শুধুমাত্র স্বীকৃত বিএসসি ডিগ্রিধারীদের সীমিত রাখতে হবে।

বর্তমানে দুই পক্ষের আলাদা আলাদা দাবি জটিলতা বাড়িয়ে তুলেছে। বিএসসি ডিগ্রিধারীরা চাইছেন, সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধুমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হোক, কোনো ধরনের কোটা বা বিকল্প পদোন্নতি ব্যবস্থা যেন চালু না হয়। অন্যদিকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা দাবি তুলেছেন, তাদের জন্য আলাদা সুযোগ সংরক্ষিত রাখতে হবে।

এই বিরোধ এখন শুধু পেশাগত গণ্ডি ছাড়িয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যা ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে।

এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে চলার পাশাপাশি পেশাজীবী দুই পক্ষকে শান্ত করা। কমিটি এক মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনকারীরা এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে রাজি নন। ফলে সরকারের কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক দক্ষতার পরীক্ষা হচ্ছে এ আন্দোলনে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং ক্রমবর্ধমান অচলাবস্থায় পরিস্থিতি যে কোনো সময় আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। বৈঠক শুরু হলেও সড়কে অবস্থানকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—কেবল কথায় তারা সন্তুষ্ট নন, লিখিত প্রজ্ঞাপন ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না। ফলে প্রকৌশল পেশার ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে দেশব্যাপী যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, তার দ্রুত সমাধান সরকারের জন্য এখন সময়ের বড় দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়